জীবনযাপন করা ভাল!” পিতার কথায় শিবাজী ক্ষণকাল নীরব রহিলেন। তারপরে বলিলেন, “বাবা! আপনি যা বললেন, তা উচ্চাকাঙ্ক্ষাবিহীন হীনচেতা ব্যক্তিদিগের নিকট নিতান্তই যুক্তিসঙ্গত বটে, যশোলোলুপ রাজ-পদাকান্তকী ব্যক্তিদিগের পক্ষে এ-উপদেশ গ্ৰাহ্য হতে পারে না। রাজ্য কাহারও পৈতৃক বা বিধিনির্দিষ্ট নিজস্ব বন্ধু নহে। যে বাহুবলে অধিকার করতে পারে, তারই হয়ে যায়। সুতরাং রাজবিদ্রোহীতা কথাটার কোন মূল্য নাই। বিশেষতঃ, ইহা যে কোনও পাপ কার্যের মধ্যে গণ্য, তা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না। “পৃথিবীতে রাজপদ যখন সর্বশ্রেষ্ঠ পদ, তখন ছলে-বলে কলে-কৌশলে যেকোনও প্রকারে হউক, তা লাভ করাই আমার মতে পরম ধর্ম। যখন আমি সেই ধর্মে দীক্ষিত হয়েছি, তখন আর সোলতানের নিকট বশ্যতা স্বীকার করা আমার পক্ষে অসম্ভব ।” শাহজী : বৎস শিবা! তুমি যা বললে, তা অনেকটা সত্য বটে। কিন্তু তুমি কি বাহুবলে রাজ্য অধিকার করেছ? কিম্বা করতে সমর্থ? তুমি অত্যন্ত ভুল বুঝছা! তুমি যে-বৃত্তি অবলম্বন করেছ, তা বীরপুরুষ বা রাজধর্ম ব্যক্তির বৃত্তি বলে কদাপি অভিহিত হতে পারে না, পূর্বেই বলেছি, ইহা অতি জঘন্য দস্যবৃত্তি! দসু্যু সকলেরই ঘূণার পাত্র এবং শূল-দণ্ডে বধ্য। শিবা ; কিন্তু এই দস্যবৃত্তি ব্যতীত যখন অন্য কোনও উপায়ে অভীষ্ট সিদ্ধির সম্ভাবনা নাই, তখন এই দাসুদৃঢ়ভাবেই আমাকে উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য সাধনা করতে হবে। আমি এই কর্তব্য হতে কিছুতেই আর এখন বিচলিত হতে পারি না। আপনি আর বিজাপুরে ফিরে যাবেন না। পর্বত ও অরণ্যসন্ধুল দুৰ্গম কঙ্কন প্রদেশের দুর্গে যেয়ে সুখে বাস করুন। আপনার কেহ কেশও স্পর্শ করতে পারবে না। আমি এদিকে ছলে-বলে কলে-কৌশলে যো-রূপেই হউক, সোলতানের আধিপত্য নষ্ট করে রাজ্যস্থাপনের জন্য প্ৰাণপণে চেষ্টা করব। যদি কোনও বিপদ ঘটে, তা আমার প্রতিই ঘটবে। যদি কিছু অধৰ্ম হয়, তা আমারই হবে । সে জন্য আপনার কোনও চিন্তা নাই। আপনি আমার আর কোনও কার্যেরই আলোচনা 夺死可可旧 শিবাজীর কথা শুনিয়া শাহজী একটু রুষ্ট হইয়া রুক্ষ স্বরে বলিলেন, “কি আশ্চৰ্য, তোমার পাপ কাৰ্য-মহাপাপ কার্যেরও সমালোচনা করতে পারব না! আমি এমন ৱাজদ্রোহী দাসু পুত্রের মুখ দেখতেও ইচ্ছা করি না। তোমার যা ইচ্ছা, তাই করতে পাৱ, কিন্তু পরিণামে এই ঔদ্ধত্য এবং পাপের জন্য তোমাকে কঠোর শান্তি ভোগ করতে হৰে।" এই বলিয়া শাহজী নিতান্ত ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত অবস্থায় সেই নিভৃত গৃহ ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলেন। Σ0