পুনঃ আবেদন-নিবেদন এবং প্রার্থনা ও মিনতি চলিতে লাগিল। অবশেষে শিবাজী এক দিন মালেকা আমেনা বানুর চরণে লুষ্ঠিত হইয়া তাহার কৃপাভিখারী হইলেন। মালেকা আমেনা বানু তখন আফজাল খাকে বিশেষরূপ অনুরোধ করিলেন । পরামর্শ হইল যে, শিবাজী স্বেচ্ছায় আনন্দ-উল্লাসে তারাবাঈকে রাজ্যোচিত আড়ম্বরে আফজাল ধার করে সমর্পণ করিবেন। আর আফজাল খাঁ শিবাজীকে তাহার অধিকৃত পরগণা এবং কোরাগুলির মাত্র এক-চতুর্থাংশ ছাড়িয়া দিবেন। শিবাজী দস্তুরমত বিজাপুর সোলতানের আধিপত্য ধর্মতঃ এবং কার্যতঃ স্বীকার করবেন। শিবাজী মুসলমানদের যে-সমস্ত মসজিদ ভগ্ন করিয়াছেন, তাহ সমস্তই যথাযথারূপে প্ৰস্তুত করিয়া দিবেন। শিবাজী রণতরী রাখিতে পারিৱেন না। এই সমস্ত শর্ত যথারীতি লিখিয়া বিজাপুর দরবারে প্রেরণ করা হইল। বিজাপুর দরবার একবারেই শিবাজীর উৎসাদনের পক্ষপাতী ছিলেন; কিন্তু আফজাল খাঁর অনুরোধে এই সমস্ত শর্ত স্বীকার করিয়া সন্ধি স্থাপনের জন্য অনুমতি প্ৰদান করিলেন । ቩ আফজাল খাঁর সহিত তারাবাঈয়ের বিবাহ সম্বন্ধে বিজাপুরের সোলতান প্রথমতঃ আপত্তি তুলিলেন। কিন্তু তারাবাঈ-এর করুণ প্রার্থনা এবং গভীর ব্যাকুলতাপূর্ণ পত্র পাইয়া পরে অনুমোদন করিলেন। অতঃপর ২১শে চৈত্র শুক্রবারে উভয় পক্ষের প্রধান প্রধান সামন্তদিগের সম্মুখে যথারীতি সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হইল। শিবাজীর প্রার্থনানুযায়ী মালোজীকে আমেনা বানু বিনা নিড্রয়ে মুক্তি প্ৰদান করিলেন। মালেকা বলিলেন, “মালোজী আপনি তারাকে বেইস করে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি সচেতন এবং সশস্ত্রাবস্থায় আপনাকে বন্দী করেছি। সুতরাং আশা করি, আমাতে কোনও হীনতা দর্শন করবেন না।” মালোজী লজায় অধোবাদন হইয়া বলিলেন, “আপনার সাহস যেমন অপরিসীম, দয়াও তেমনি তুলনাহীন! আপনি আমাকে চিরকৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করলেন।” অনন্তর যথাসময়ে বৈশাখী পূর্ণিমাতে বিবাহের দিন নির্ধারিত হইল। শিবাজী তারাকে লইয়া বাড়ী ফিরিলেন। তারার প্রতি যাহাতে কোনও উৎপীড়ন না হয়, সেজন্য মালেকা শিবাজীকে বিশেষভাবে সাবধান করিয়া দিলেন। তারার প্রতি অন্যায় ব্যবহার হইলে শিবাজীকে যে সকল-হারা হইতে হইবে, তাহা বিশেষরূপে বুঝাইয়া দেওয়া হইল। GS
