পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নজীব-উদ্দৌলা বলিলেন, “এই পাতালপুরীতে বিশেষ সাবধানে প্রবেশ করতে হবে। কত দসু্য এখানে আছে, তা’ অবগত হওয়া আবশ্যক। ভৈরবী মূর্তি পরিত্যাগ করি তোমাদিগকে মারাঠী সৈনিক্টবেশে সজিত হওয়া আবশ্যক।” ফিরোজা ও মুরলা উভয়েই তখন নিহত মারাঠী দাসুদিগের বস্ত্র ও উন্দ্রীষ সংগ্ৰহ করিয়া মারাষ্ঠী বগীর বেশেই সজ্জিত হইলেন। রাত্রিকালেই দাসুদিগের গমনাগমনের সময় বিবেচনাপূর্বক তিনজনে পরামর্শ আঁটিয়া সেই বিরাট ঝোপের মধ্যেই লুক্কায়িত হইয়া রহিলেন। রাত্রি দুই প্রহরের সময় দেখিতে পাইলেন যে, একদল মারাঠী দাসু্য টাকার তোড়া মস্তকে বহন করিয়া মশাল হন্তে গুহার দিকে অগ্রসর হইতেছে। দ্বাদশজনের মন্তকে টাকার তোড়া এবং তিনজনের মন্তকে অলঙ্কার-পত্রের পুঁটুলী বলিয়া বোধ হইল। সকলের হন্তেই উলঙ্গ তরবারি। দসু্যগণ বরাবর সরাসরি সেই প্ৰস্তরের নিকটবতী হইয়া শিকল টানিয়া দ্বারোনোচন করিয়া ভিতরে প্রবেশ করিবার পরে প্রস্তরখানি আপনা। আপনি আবার সুড়ঙ্গের মুখে চাপিয়া গেল। নজীব-উদ্দৌলা, ফিরোজা বেগম এবং মুরলা সকলেই বুঝিতে পারলেন যে, এই গুপ্ত পাতালপুরীতে মারাঠীদিগের বিশাল ধনভাণ্ডার সংস্থাপিত। এই ধন্যভাণ্ডার লুঠ করিতে পারিলে বিপুল যুদ্ধের আয়োজন হইতে পারে। কিন্তু কি উপায়ে এই পাতালপুরী অধিকার করিতে পারা যায়, তাহাই হইতেছে বিষম সমস্যা। এই বিপুল অৰ্থ কিরূপেই বা এখন হইতে দিল্লীতে লইয়া যাইতে পারা যায়, তাহাও এক দুরূহ সমস্যা। দিল্পী এখান হইতে বহু দূরে। সমস্ত পথেই বগীদিগের আনাগোনা। মুসলমানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি! প্রকাশ্যে এই অর্থ লইয়া যাইবার সম্ভাবনা অসম্ভব । গুপ্ত আক্রমণ হঠাৎ লুণ্ঠন করিয়া গুপ্তভাবে লইয়া যাওয়া ব্যতীত আর কোনও উপায় নাই। এখন চুপ করিয়া এখান হইতে পলায়ন করাই শ্ৰেয়ঃ। তােহাৱা এই গুপ্ত ভাণ্ডারের তত্ত্ব জানিতে পারিয়াছে, কোনওরূপে দসু্যদের মনে এরূপ সন্দেহের উদ্রেক হওয়াই ভীষণ ক্ষতিজনক । সুতরাং সকলে মিলিয়া নীরবে সেস্থান ত্যাগ করিয়া প্ৰস্থান করিবার জন্য উদ্যত হইলেন। নজীব-উদ্দৌলা এই গুপ্তস্থানের নকশা ও পথঘাটের নির্দেশ বিশেষরূপে লিখিয়া লইলেন এবং পর্যবেক্ষণ করিয়া স্মরণযোগ্য করিয়া রাখিলেন। নজীব-উদ্দৌলা ফিরোজা বেগমকে বলিলেন, “এই গুপ্ত পাতালপুরীর সমত রহস্য অবগত হওয়া আবশ্যক। আমার যার-পর-নাই কৌতুহলের উদ্রেক হচ্ছে। তৎপর অর্থের পরিমাণ এবং গুহাবাসী দাসুদিগের সংখ্যা ভাল করে বিদিত হওয়া একান্ত আবশ্যক। দেশে ফিরে এই গুপ্ত-গৃহ আক্রমণ করবার বিহিত উপায় অবলম্বন কৱা আবশ্যক।” এই বলিয়া সকলেই পাত্ৰোখানপূর্বক সন্তৰ্পণে অন্য দিকে রওয়ানা হইলেন । QNG)