পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঁৱতে লাগিল। স্বর্ণময়ী হৃদয়ে অনেকের কথা আলোচনা করিল, অনেকেৰ মূর্তি মানসপট অঙ্কন করিল, কিন্তু ঈসা খাঁর কাছে সকলেই মলিন হইয়া গেল। ঈসা। খাৱ নায় হৃদয়বান সুহ্মর বীরপুরুষ, যুবতী আর কাহাকেও পৃথিবী অনুসন্ধান করিয়াও দেখিণ্ডে পাইল না। ঈসা খাঁ বালাকাল হইতেই তাহাকে আনন্দ দিয়া আসিয়াছে। কিন্তু আজ যেন সে আনন্দ শতগুণে উথলিয়া উঠিয়াছে : স্বর্ণময়ী ঈসা খাৱ সম্বন্ধে অনেক চিন্তা করিল। কত উজ্জ্বল স্মৃতি তাহার মনে পড়িল। সেই পাঁচ বৎসব হইল, একদিন স্বর্ণময়ী শ্ৰীপুরের কৃষ্ণদীঘিতে সাঁতরাইতে গিয়া মাঝখানে ডুবিয মরিতেছিল! শত শত লোক পাড়ে দাঁড়াইয়া আর্তকণ্ঠে চীৎকার কবিতেছিল। ঈসা খাঁ তাহাদের বাটীতে পুণ্যাহ উপলক্ষে নিমন্বিত হইয়া উপস্থিত ছিলেন। তিনি মুহূর্ত মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া তাহাকে উদ্ধার করিয়াছিলেন। কতদিন রাজবাড়ীর ওস্তাদ মৌলানা ফখরউদ্দীনের নিকট নিজামীর সেকান্দরনামা, জামীর জেলেখা এবং ফেরদৌসীর শাহুনামার যে সমস্ত অংশ ভাল করিয়া বুঝিতে পাবে নাই, ঈসা খাঁ তাহাকে তাহা কত সুন্দরীরূপে বুঝাইয়া দিয়াছেন। সেই একবার রাজবাড়ীর নিকটবতী জঙ্গলে একটি ভীষণ বাঘ আসিয়া কত লোককে খুন জখম করিতেছিল। বড় বড় শিকারীরাও হাতীতে চড়িয়া শিকার করিতে সাহস পাইতেছিল না। তারপর ঈসা খাঁ আসিয়া সকলের নিষেধ ও ভীতি অগ্ৰাহ্য করতঃ একদিন প্ৰাতঃকালে তরবারি-হস্তে যাইয়া বিনা হাতীতে সেই বাঘ একাকী মারিয়া আনিয়া সকলের বিস্ময় উৎপাদনা করিয়াছিলেন_ ইত্যাকার বহু সুখ ও আনন্দময় স্মৃতি একে একে তাহার মনে পড়িতে লাগিল এবং ঈসা খাকে তাহার হৃদয়ের সম্মুখে এক অপূর্ব সৌন্দর্য ও ক্ষমতাশালী হৃদয়বান পুরুষরূপে প্ৰতিভাত করিল। উষার আলোক যেসন তাহার অপূর্ব যাদুকরী তুলিকায় অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীর চক্ষুর সম্মুখে নীলাকাশের নীরদমালাকে বিবিধ বিচিত্র মনঃপ্রাণ-বিমোহনরূপে সাজাইয়া দেয়, তেমনি অতীতের স্মৃতি বর্তমান ঘটনার তুলিকায় বিচিত্র উজ্জ্বল রং ফলাইয়া যুবতীর মানস-চক্ষে ঈসা খাকে তাহার হৃদয়ের প্ৰিয়তম, সুন্দরতম এবং শেষে আকাঙ্ক্ষিতজনরূপে অঙ্কিত করিল! যুবতী শিহরিয়া উঠিল। তাহার। আপাদমস্তকে কি এক বিদ্যুতের তরঙ্গ প্রবাহিত হইল। যুবতী এর্তক্ষণ পর্যন্ত ঈসা খাঁর অনিন্দ্যসুন্দর তেজোদীপ্ত বদনমণ্ডল এবং সুদীর্ঘ কৃষ্ণতারা সমুজ্জ্বল ভাসা ভাসা চক্ষুর সৌন্দৰ্য-সুধা পান করিতেছিল। কিন্তু আর পারিল না, লজ্জা আসিয়া তাহার অনিচ্ছা সত্ত্বেও চক্ষুকে নত করিয়া দিল । যুবতীর হৃদয়ের উপর দিয়া কত কি চিন্তার তুফান ও ভাবের তরঙ্গ প্রবাহিত হইয়া যাইতেছে, কিন্তু ঈসা খাঁ আনমনে পানই চিবাইতেছেন। পান চিবান শেষ হইলে—ছিবড়া ফেলিয়া যুবক একবার নেত্র ফিরাইয়া যুবতীর দিকে তাকাইয়া বুলিলেন, “স্বর্ণ! এখন কি করা যায়? বুটি ও তুফান এখনও তো সমানভাবে সঙ্গছে , তুমি পাষ্ঠীর ভিতরে শুয়ে পড়, অনেক রাত হয়েছে। শেষে অসুখ করতে እ8