পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খানের বাটী বিনষ্ট হওয়ায় রাজপুরী ব্যতীত তাঁহাকে আর স্থান দান করিবারই বা স্থান কোথায়? রুমী খাঁর প্রকৃত নাম ছিল ফররোিখ আফেব্দী। তিনি তুরস্কের রাজবংশজ পুরুষ। রাজনৈতিক কুটিল চক্রান্তে পতিত হইয়া আত্মরক্ষার জন্য স্বদেশ হইতে ভারতবর্ষে আগমন করেন। তিনি সমরবিদ্যাবিশারদ তেজীৱী ও দেবকান্তিবিশিষ্ট পুরুষ ছিলেন। মালবের সুলতান রোকনউদ্দীন তাঁহার পরিচয় লাভ করিয়া তাহার বন্ধু চিতোরের রাণা উদয়সিংহের নিকট তাঁহার তোপখানার তত্ত্বাবধানের কাৰ্যে পঠাইয়া দেন। রাণা ক্রমশঃ তাহার গুণগ্রামে মুগ্ধ হইয়া প্রধান সেনাপতির পদ পর্যন্ত অৰ্পণ করেন। তিনি কম-দণ হইতে আসিয়াছিলেন বলিয়া সাধারণ্যে রুমী খান নামে অভিহিত হন। রুমা খা, যেমন সুশ্ৰী সুঠাম কান্তিমান ছিলেন, অন্যদিকে তেমনি অক্লান্ত পরিশ্রমী অধ্যবসায়ী তেজস্বী পুরুষ ছিলেন। তাঁহাকে দেখিলেই কর্মঠ, বুদ্ধিমান এবং দৃঢ়চেতা ব্যক্তি বলিয়া বোধ হইত। রুমী খী চিতোর সৈন্যদলে প্রবেশ করিবার পর হইতে চিতোরের সামরিক বিভাগের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধিত হয়। পার্শ্ববতী রাজ্যসমূহ বাহুবলে জয় করিয়া চিতোরের বিস্তৃতি সাধন করিয়াছিলেন। দুর্গ, পরিখা, তোপখানা, শেলখানা—সকলই নৃতনভাবে সংস্কৃত, বর্ধিত এবং সমুন্নত হইয়াছিল। রুমী খাঁ আহত না হইলে সুলতান আহমদ শাহের পক্ষে জয়লাভ করা সম্ভব হইত। কিনা, সন্দেহের বিষয়। রাণা উদয়সিংহ রুমী খাকে প্ৰিয়তম হিতৈষী বন্ধুর ন্যায় ভালোবাসিতেন। রুমী খ্যার সাংঘাতিক জখমে রাণা নিতান্তই দুঃখিত এবং বিষন্ন হইয়া পড়িয়াছিলেন। রাজ-চিকিৎসক ভিষক-প্রবার সনৎকুমার সেন চিকিৎসা-বিষয়ে বিলক্ষণ পটু ছিলেন। রাণা তাঁহাকেই রুমী খাঁর চিকিৎসায় নিযুক্ত করিলেন। সনৎকুসাের ইউনানী এবং আয়ুৰ্বেদ উভয় শাস্ত্ৰে বুৎপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। জয়পুরের বিখ্যাত বৈদ্য হরকুমার সেনের নিকট আয়ুর্বেদের সমস্ত শাখায় জ্ঞানলাভ করিয়া, দিল্লীর ফিরোজ শাহের স্থাপিত তিকিবয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হইয়া শেষ পরীক্ষায় গৌরবের সহিত উৰ্ত্তীর্ণ হইয়া সনদ লাভ করিয়াছিলেন। । সনৎকুমার একখানি কুসীতে বসিয়া রুমী খাঁর হাতের পটি খুলিতেছেন। কুমারী স্বর্ণবাঈ এবং হীরা ঔষধ-পত্র ও গরম পানি লইয়া হন্তের ঘা ধৌত করিবার জন্য দাড়াইয়া আছে। হীরাবাঈ বাল-বিধবা। পরিধানে শুভ্ৰ পট্টবস্ত্ৰ । হন্তে দুইগাছি মাত্র স্বর্ণকিঙ্কণ। বিধবা বলিয়া অন্য কোনও অলঙ্কার নাই। তবে রাজদুহিতা বলিয়া হন্তে স্বর্ণবলয় ধারণ দোষাবহ ছিল না। হীরাবাঈ-এর গঠন দোহারা এবং কমনীয়। কান্ত উজ্জ্বল এবং মধুর। বর্ণ দুষ্কমিশ্ৰিত আলতার ন্যায়। ΣΣ