পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেবল পুণ্য ও খ্ৰীতির ধাৱা উহুলিয়া বাহিতে লাগিল। ক্রমশঃ আশ্রম বাসে যতই অত্যন্ত হইতে লাগিলেন, ততই শাহজাদা ও রাজকুমায়ী রাজপুরীর কথা তুলিতে লাগিলেন। রাজপুরীর জীবনযাত্রা ততই কুটিল আড়ম্বরপূর্ণ ও কৃত্রিম বলিয়া বােধ করিতে লাগিল। ক্রমশঃ আড়ম্বরপূর্ণ রাজপ্রাসাদ-বাসের প্রতি বিরক্ত এবং বনের নির্জন ও শান্ত-শীতল জীবনযাত্ৰাৱ প্ৰতি শ্ৰদ্ধার ভাব জমাট বাধিয়া গেল । বিংশ পরিচ্ছেদ গুজরাটিপতি সুলতান আহমদ শাহু নিতান্ত শিকার প্রিয় ছিলেন। প্রতি বৎসর বসন্তকালে বিপুল ঘটায় শিকারে বাহির হইতেন। আমরা যে বৎসরের ঘটনার কথা লিপিবদ্ধ করিতেছি, সে বৎসর তিনি বিলাসপুরের নিবিড় জঙ্গলে ব্যাঘ, গণ্ডার ও ভদ্ৰক শিকারে আগমন করিয়াছিলেন। তাহার তেজস্বিনী কায়সারজাহী বেগমও মৃগয়াপটু ছিলেন। তিনিও প্রতি বৎসর স্বামীর সঙ্গে মৃগয়ার্থে বহির্গত হইতেন। তীরন্দাজীতে তাহার বেশ হাতিষশও ছিল। তাহার শাণিত শায়কসন্ধানে শত শত শ্বাপদ সদ্য সদ্য শমনাসদনে প্ৰেৱিত হইত। সুলতান শিকার করিতে করিতে নিবিড় বনে প্ৰবেশ করিলেন। বহু পরিশ্রমে তিনটি ভল্লুক ও দুইটি বৃহৎ ব্যাঘ্ৰ বধ করিয়া তিনি নিতান্ত শ্ৰান্ত হইয়া পড়িলেন। শিবিরে প্রত্মাবর্তন করিবেন, এমন সময় একটি প্ৰকাণ্ড হরিণ দেখিয়া তাহার পশ্চাতে অশ্ব ধাবিত করিলেন। হরিণটি ক্রমশঃ আক্রবক্ৰ গতিতে অনেক দূরে যাইয়া নিবিড় বনের মধ্যভাগে প্ৰবেশ করিলে, সুলতানও সেই গভীর বনের মধ্যে প্ৰবেশ করিলেন। সুলতান শায়ক সন্ধান করিয়াছেন, এমন সময় পার্শ্বদেশের ঝোপ হইতে একটি বিরাট ব্যাঘ্ৰ সুলতানের অশ্বের মন্তকের উপর লাফাইয়া পড়িয়া কামড়াইয়া ধৱিল। ঘোড়াটি ভীষণরূপে আক্রান্ত হইয়া উল্লম্ফন করায় সুলতান সহসা ভূপতিত হইলেন। ঘোড়াটি ব্যান্ত্রের আক্রমণে মাটীতে পড়িয়া গেল। সুলতান মাটীতে পতিত হইয়া তরবারিৱা ভীষণ আঘাতে ব্যােন্ত্রটিকে নিহত করিবার উপক্রমে, বাঘিনীটাও সুলতানকে আক্রমণ করিল। যগপৎ ব্যাঘ-দম্পতি কর্তৃক আহমদ শাহু আক্রান্ত হওয়ায় গুরুতররূপে জখম হইয়া পড়িলেন। ব্যাঘটিকে নিহত করিবার জন্য চেষ্টা কৱিলেও মাত্র সে আহত হইল। আজুমদ শাহের ঘোড়াটি আরবি-জাত ছিল। সে জখম হুইয়াও পলায়ন না করিয়া প্ৰত্নর বিপদে উচ্চকণ্ঠে হিনী হিন করিয়া ভাকিতে এবং ব্যাব্ৰটিকে পদাঘাত করিতে লাগিল। যেখানে এই ব্যাপাৱ সংঘটিত হইয়াছিল, সেই স্থান নূরউদ্দীনের আশ্রম