পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নূতন নূতন শোভার সৃষ্টি ও দৃশ্যের অবতারণা করিতেছে। বিলাসপুরের কানন-আশ্রমে সন্ধ্যার বাতাস ধীরে ধীরে প্রবাহিত হইতেছে। সে ফুরফুরে হাওয়ায় কামিনী ও বকুলের ফুলগুলি কুৱৰুৱা করিয়া খসিয়া পড়িতেছে। আম্রবৃক্ষ হইতে ছােট ছােট আমগুলি টপ টপ করিয়া পড়িতেছে। তুলিয়াছে। রুক্সিণী এহেন সময়ে আশ্রমের সন্মুখস্থ বাগিচার মধ্যে স্বহন্তরোপিত বৃক্ষ-লতাগুলির প্রতি মমতাপূর্ণ চক্ষু ফিরাইয়া এবং স্নেহকোমল হাত বুলাইয়া বেড়াইতেছিলেন। আর আবশ্যকবোধে কাহারও কাহারও মূলে স্নেহধারারূপ শীতল সলিলধারা ঢালিয়া দিতেছিলেন । অস্তমান রবির কিরণজাল মেঘের গায়ে ঠেকিয়া তাহার লাল বর্ণ আভা পৃথিবীর গায়ে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। রুক্মিণীর ফুটন্ত কমল-নিন্দিত কমনীয় কান্তিময় রমণীয় মুখমণ্ডলের উপর সে নীলিমা পড়িয়া মণিজনমনোহর শোভা হইয়াছিল। চতুর্দিকে দূরে শ্যাম শোভাসম্পন্ন সমুন্নত তরুশ্রেণীর বিনোদ দৃশ্য। মধ্যে স্বচ্ছ সলিল পরিপূর্ণ সরোবরের ঢল ঢল। শোভা! তাহার তটে সবুজ তৃণক্ষেত্রের মধ্যে ফুল-ফুল-কুল-সমাকুল মনোহর কুজি-বীথিাকা! আর তাহার মধ্যে উদ্ভিন্নযৌবনা সমুজ্জ্বলকান্তি ভুবন-মোহিনী সুন্দরী রুক্মিণীর রূপের ছটা মরি! মরি! কি চমৎকার চিত্তবিনােদন দৃশ্য! মনােহারিণী শোভার বাহার! অরুণসিংহ নিবিড় অন্তরালে থাকিয়া তীক্ষ এবং তীব্র দৃষ্টিতে সুন্দরীকুলললামাতৃতা রুক্মিণীর সৌন্দর্য দেখিয়া দেখিয়া জ্বলিতে লাগিলেন। হায়! এমন নিরুপমা রূপসী তরুণীর যৌবনের তরুণ প্ৰেমসম্ভোগ তাঁহার ভাগ্যে ঘটিয়া উঠিল না! ইচ্ছা হইতেছিল, এই নির্মম সৌন্দর্যের বিমল প্রতিমার চরণতলে আছড়াইয়া পড়িয়া একবার তাহার কৃপা ভিক্ষা করিয়া দেখে। কিন্তু হায়! সে চেষ্টা তো অনেকবার হইয়াছে। সে যে কিছুতেই ভুলিবার পাত্রী নহে। সে যে প্ৰাণান্তেও তাহাকে চাহে না। সে যে নূরউদ্দীন গতিপ্ৰাণ! সে যে নূরউদ্দীনের নেশায় মাতোয়ারা, তাহার সেবায় আত্মহারা—তাহার প্রেমে বিবশা! তাহার চিন্তায় সরাসা। তবে-তবে আর কিসের সাধনা? এইবার প্রতিহিংসার সাধনা! বিষাদিন্তু শাণিত ছুরিকার সাধনা। বিষের জ্বালায় দন্তু করিয়া করিয়া ঐ পাপ হৃদয় তন্ম করিতে হইবে। কঠোর দণ্ডে এই মোহ ও কামবিকারের নেশা চূৰ্ণ করিতে হইবে। এইৰূপ চিন্তা করিতে করিতে অরুণ সিংহ উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিলেন। মুহূর্তের মধ্যে শার্দুলের ন্যায় বেগে রুক্মিণীর প্রতি ধাবিত হইলেন। রুক্মিণী একটি গাছের মূলে পানি দিতেছিলেন। সহসা পদ-শব্দে চকিত হুইয়া দেখিলেন অরুণ সিংহ তাহার দিকে ক্রুদ্ধ মূর্তিতে দুটিয়া আসিতেছে। ব্যােন্ত্ৰ-দর্শনে মৃগী যেমন চকিত এবং 0ጽእ