পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যতীত ভিখারিণী! ঈসা খাঁ শিহরিয়া উঠিলেন। বসিয়া, গুইয়া, দাঁড়াইয়া চিন্তা করিলেন—কিন্তু সমস্যার কিছুই মীমাংসা করিতে পারিলেন না। ঈসা খাঁ রায়নন্দিনীকে যখন মন্দিরে দর্শন করিয়াছিলেন-যখন তাহার সহিত আলাপ করিয়াছিলেন-তখনও স্বর্ণের সৌন্দর্য ও ভাষা তাঁহাকে আনন্দ দান করিয়াছিল। কিন্তু সে আনন্দ তাহার হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা স্পর্শ করিতে পাৱে নাই । তিনি ইচ্ছা! করিলেই স্বর্ণকে অনায়াসেই বিবাহ করিতে পারিতেন-বােৱ চুইয়ার প্রধান ঈসা। খাঁ মসনদ আলীকে, কেদার রায় যে পরম আগ্রহে কন্যাদান করিয়া জামাতৃপদে বরণ করিতে কৃতাৰ্থতা জ্ঞান করিবেন, তাহা তিনি বেশ জানিতেন; কিন্তু তখন তাহার মানসিক অবস্থা অন্যরূপ ছিল। প্রথমতঃ ঈসা খাঁ নিজের বিবাহ সম্বন্ধে স্থির সঙ্কল্প হইয়াছিলেন না; তাহার পর তাঁহার ইচ্ছা ছিল যে, বিবাহ করিলে কোন বীর্যবতী বীরাঙ্গনাকেই বিবাহ করিবেন! বীরাঙ্গনা বিবাহের খেয়াল ছিল বলিয়াই, স্বৰ্ণময়ীকে পরম রূপবতী এবং ফুটন্ত-যৌবনা দর্শন করিলেও কদাপি তাঁহাকে বিবাহ কবিরার কল্পনাও তাঁহার মস্তিন্তে উদয় হয় নাই। কারণ, হিন্দু-কন্যাতে বীরত্বের আশা নিম্ববৃক্ষে আম্র ফলের আশা সদৃশ। এজন্য স্বর্ণময়ী তাঁহার নেত্র গগন-শোভন চিত্ত-বিনোদন তারকার ন্যায় ফুটিয়াছিল, হাসিয়াছিল এবং কিরণ বিতরণও করিয়াছিল ; কিন্তু তাহাতে তাঁহার চিত্ত-বিকার জন্মাইতে সমর্থ হয় নাই। তারার সৌন্দর্য দেখিয়াই তৃপ্ত হইতে হয়। ছিড়িয়া গলে পরিবার কাহারও আকাজক্ষা হয় না। কিন্তু স্বর্ণের প্রাণ দিয়া লেখা প্ৰাণ-ঢালা প্রেমের সৌন্দৰ্য-মাখা, আত্মোৎসর্গের অটল বিশ্বাস ও অচল নিষ্ঠাপূৰ্ণ পত্র পাঠে স্বর্ণময়ীর নাক্ষত্রিক সৌন্দৰ্য তাহার নিকট হইতে ক্রমশঃ লোপ পাইতে লাগিল। তিনি যতই পুনঃ পুনঃ সেই হৃদয়ের লিপি পাঠ করিতে এবং নিজের হৃদয়-মুকুরে স্বর্ণের হৃদয়ের ছবি দেখিতে লাগিলেন, ততই স্বর্ণময়ী তাহার নিকট তারকার পরিবর্তে গোলাপ পরিবর্তিত হইতে লাগিল। অবশেষে স্বর্ণ তাঁহার সম্মুখে মনপ্রাণ-গ্ৰীণন সুরভিপূর্ণ শিশিরসিক্ত, উষালোক-প্ৰস্ফুটিত অতি মনোহর গরিমাপূর্ণ রক্তাভ লোভনীয় বসরাই গোলাপের ন্যায় প্রতিভাত হইল। তখন তিনিও উহাকে আদর করিয়া বুকে তুলিয়া লইতে প্ৰস্তুত হইলেন। কিন্তু হায়! ঠিক এমন সময়েই তাঁহার জননী উদ্যানের প্রবেশদ্বার বন্ধ করিয়া দিলেন। তিনি ইচ্ছা করিলে, সামান্য বল প্রয়োগেই এ-দ্বার উন্মোচন করিতে পারিতেন। কিন্তু জননীর হিন্দু রমণী বিবাহের যুক্তিসঙ্গত অনিষ্টকারী মত লৌহ-অর্গলের মত সে-দ্বার কঠিনভাবে অবরুদ্ধ করিল। জননীর যুক্তির সারবত্তায় এবং বচনের ওজস্বিতায় ঈসা খাঁর উদাম হৃদয়োর প্ৰেম-প্রবাহ, হযরত দায়ুদের সঙ্গীত শ্ৰবণে উত্তাল তরঙ্গময়ী খরগতি স্রোতস্বিনীর ন্যায় স্তম্ভিত হইয়া পড়িল । ঈসা খাঁ চিন্তা করিয়া দেখিলেন, রায়-নন্দিনীর প্রেমের নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করাও যা, আর স্বর্ণময়ীর কোমল তরল প্ৰেমপূরিত-বক্ষে শাণিত বিষদিও দুরিকা Y9ዓ