পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তুমি যদি কোনরূপে নীেকার হালটি ধরে রাখতে পাের, তা হল আমি একাই দাঁড় ফেলে নিয়ে যেতে পারি। এ ছাড়া আর কোন উপায় নাই। তুমি যখন হতভাগ্যের জীবন-সমিনী হয়েছ, তখন দুঃখ ভোগ কৱা ছাড়া উপায় কি?” মাহতাব খ্যা এমন গভীর অনুরাগ এবং শুভ্ৰ সহানুভূতির সহিত কথাটি বললেন যে, প্ৰতাপ-বালার কর্ণে তাহা অমৃতবর্ষণ করিল। নৌকায় আরোহণ কবা পর্যন্ত মাঝিদের জন্য লজায় পরস্পর কোন কথাবার্তা বলিতে পারে নাই। এক্ষণে লোক-সঙ্কোচ দূৰ হওয়ায় এবং বিপদ সমাগমে উভয়ের হৃদয়, চক্ষু ও জিহ্বা মুক্তাবস্থায় সুরভিত প্রেমের অমিয় দৃষ্টি ও মধুর ভাষা উদগীৰ্ণ করিতে লাগিল। হাতুড়ির আঘাতৃ যেমন উত্তণ্ড ধাতুকে পরস্পর অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্মিলিত করিয়া দেয়, বিপদও তেমনি দুইটি অনুরাগোষ্ণ হৃদয়কে একেবারে মিলাইয়া দেয়। অগ্নাত্তাপে অল্পপরিমিত দুগ্ধ যেমন বৃহৎ পাত্রকে পূর্ণ করিয়া ফুলিযা উঠে, বিপদের আঁচেও তেমনি হৃদয়ের কোণে "যে প্ৰেম, যে সহানুভূতি নীৱৰে আলস্যশষ্যায় পড়িয়া ঘুমাইতেছে তাহাও জোরেশোরে দশগুণ উচ্ছসিত হইয়া হৃদয়ের কল ভাসাইয়া অপর হৃদয়কে ভাসাইয়া ফেলে। তখন দুই মিশিয়া 4ाद छ । অরুণাবতী বাল্যকাল হইতেই নীে-ক্রীড়ারত ছিল বলিয়া হাল ধরিতে অভ্যন্তা ছিল। এক্ষণে বিপদকালে প্ৰতাপ-কুমারী হাল ধরিয়া বসিল, আর খাঁ সাহেব বীর-বাহুর বিপুল বলে দুই হন্তে দাঁড়-ফেলিতে লাগিলেন। নীেকা নদীর খরাপ্রবাহ কাটিয়া কল কল করিয়া দুটিয়া চলিল। ছয় দাঁড়ে নীেকা যেরূপ দ্রুত চলিয়াছিল, মাহতাব খাঁর দুই দাঁড়েও নীেকা প্ৰায় সেইরূপ দুটিল। মাহতাব খাঁ তালে তালে দাড় ফেলিতেছেন, আর সুন্দরী অরুণাবতী সাবধান-হন্তে হাল ধরিয়া তাহার পানে চাহিয়া মৃদুমন্দ হাসিতেছে। সে হাসিতে মাহতাব খাও হাসিতেছেন। পরস্পরের হাসিতে উভয়ের হৃদয়ে যে কোটি নক্ষত্রের ক্লিন্ত আলোক” মরকতদ্যুতির ন্যায় জুলিতেছে- ঐ নীলাকাশের তারাগুলি যদি সে প্রেমামৃতমাখা দিব্য দীপ্তি দর্শন করিত, তাহা হইলে এই মুহূর্তে সমন্তগুলি আকাশচু্যত হইয়া চিরদিনের জন্য ডুবিয়া রহিত । উর্ধে অনন্ত নক্ষত্ৰখচিত জলদ-বিমুক্ত অনন্ত “ নভোমণ্ডল, নিম্নে শ্যামলা ধারণী বক্ষে রাজত প্ৰবাহ বামনী নদী কোটি তারকার প্রতিবিম্ব হৃদয়ে ধারণ করতঃ উদ্দাম গতিতে কল কল ছল ছল করিয়া ফুটন্ত যৌবনা প্রেমোন্মদিনী রসাবতী যুবতীর ন্যায় সাগরসঙ্গমে দুটিয়াছে; আর তাহার বক্ষে নবীন প্রেমিক-প্রেমিকা দাড় ফেলিয়া হাল ধরিয়া অনন্ত আনন্দ ও অপার আশায় হৃদয় পূৰ্ণ করিয়া নীেকা বাহিয়া চলিয়াছে। মরি! মরি!!! কি ভুবনমোহন চিত্তবিনোদন লোচনারঞ্জন দৃশ্য! যে বিপদ এমন অবস্থার সংঘটন করে, তাহা সম্পদ অপেক্ষাও প্রার্থনীয় নহে কি? নীেকা দুটিয়াছে। আকাশে তারকা দলও ভুটিয়া চলিয়াছে। বামনী ডুটিতেছে, \ემა