পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিছুদিন এই রমণীয় কাননাবাসে বাস করিবার জন্যও ব্যাকুল হইয়াছিল। নৌকায় রন্ধন করিবার পাত্রাদি সমস্তই ছিল। প্রায় দুই মণ অত্যুকৃষ্ট চাউল, কিছু দাল, দৃত, লবণ ও অন্যান্য মশলা যাহা ছিল, তাহাতে দুইজনের দুই মাস চলিবার উপায় ছিল। বনে হরিণ, নানাজাতীয় খাদ্য-পক্ষী এবং সরোবরে মৎস্যের অভাব ছিল না। মাহতাব খাঁ প্ৰথম দিবসেই এক হরিণ শিকার করিয়া তাহার গোশত কাবাব করিয়া অরুণাবতী সহ পরমানন্দে উদরপূর্তি করিলেন। অরুণাবতী মাহতাব খাঁর নিকট ইসলামের পবিত্র কলেমা পড়িয়া মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত হইল। আপাততঃ আত্মরক্ষার জন্য উভয়েই সেই নিবিড় বনে বাস করিতে লাগিলেন । TR rify भदवभ फैश्नव ১৭ই আষাঢ় মহররম উৎসব। সেকালের মহরম উৎসব এক বিরাট ব্যাপার, সমারোহকাণ্ড এবং চিত্ত-উন্মাদক বিষয় ছিল। মহররমের সে অসাধারণ আড়ম্বর, সে জাক-জমক, সে ক্রীড়া-কৌশল, সে লাঠি ও তলোয়ার খেলা, সে বাদ্যোদ্যম এবং যাবতীয় নর-নারীর মাতোয়ারা তাবের উচ্ছাস, সে বিরাট মিছিল, সে মর্সিয়া পাঠ, সে শোক প্রকাশ, সে দান খয়রাৎ, মহররমের দশদিন ব্যাপী সে সাত্ত্বিক ভাব, বর্তমানে কল্পনা ও অনুমানের বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছে। সেকালের হিন্দুমুসলমান, ধনী-দরিদ্র, আলেম-জাহেল, সকলেই মহররম উৎসবে যোগদান করিতেন। তখন বাঙ্গালা দেশে অদূরদশী কাটমোল্লার আবির্ভাব ছিল না; সুতরাং মহররম উৎসব তখন বেদাত বলিয়া অভিহিত হইত না। মহররমের দশ দিবস কেবল মুসলমান নহে, হিন্দুরা পর্যন্ত পরম পবিত্রভাবে যাপন করিতেন। মহররমের দশ দিবস চোর চুরি করিত না, ডাকাত ডাকাতি করিত না, লিম্পট লাম্পট্য ত্যাগ করিত। ধনী ধনভাণ্ডার মুক্ত করিয়া গরীবের দুঃখ বিমোচন করিত। ক্ষুধার্ত অন্ন পাইত, তৃষ্ণার্ড সুমিষ্ট সরবৎ পাইত, বস্ত্ৰহীন বস্ত্ৰ পাইত, প্রত্যেক লোক প্রত্যেকের নিকট সাদর সম্ভাষণ, আদর আপ্যায়ন এবং প্ৰেমপূৰ্ণ ব্যবহার পাইত। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সমস্ত কার্য ফেলিয়া মহররম উৎসবে যোগদান করিতেন। বীরপুরুষ অস্ত্ৰচালনায় নৈপুণ্য লাভ করিয়া বীরত্ব অর্জন করিবার, কারু ও শিল্পিগণ মহােদৱমেৱ তাজিয়া সংগঠনে আপনাদের সূহ্ম কারুকার্যের সৌন্দর্য দেখাইবার জন্য মন্তিত পরিচালনা করিবার, বালকবালিকাগণ “কাসেদ সাজিয়া আনন্দ উপভোগ করিবার, ধনী দান খয়রাতে বদ্যান্যতা লাভ করিবােৱ, দেশবাসী গ্রামবাসী পরম্পরের নিমন্ত্রণ গ্ৰহণ করিয়া