পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉》や সীতারাম “ওকে একবার কোলে নাও।” সীতারাম অগত্য পুত্রকে কোলে লইলেন। তখন রম, সকাতরে ক্ষীণকণ্ঠে রুদ্ধশ্বাসে বলিতে লাগিল, “মার দোষে ছেলেকে ত্যাগ করিও না। এই তোমার কাছে আমার শেষ ভিক্ষ । বড় রাণীর হাতে ওকে সমর্পণ করিয়া যাব মনে করেছিলাম—কিন্তু তা না করিয়া তোমারই হাতে সমর্পণ করিলাম। কথা রাখিবে কি ?” সীতারাম কলের পুতুলের মত স্বীকৃত হইলেন। রম তখন সীতারামকে আরও নিকটে আসিয়া বসিতে ইঙ্গিত করিলেন। সীতারাম সরিয়া বসিলে, রমা তার পায়ে হাত দিয়া, পায়ের ধূলা লইয়া আপনার মাথায় দিল । বলিল, “এজন্মের মত বিদায় হইলাম। আশীৰ্ব্বাদ করিও, জন্মান্তরে যেন তোমাকেই পাই ।” . . তার পর বাক্য বন্ধ হইল। শ্বাস বড় জোরে জোরে পৃড়িতে লাগিল। চক্ষুর জ্যোতি গেল। মুখের উপর কালো ছায়া আরও কালো হইতে লাগিল। শেষে সব অন্ধকার হইল। সব জ্বালা জুড়াইল। রম চলিয়া গেল। . ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ, যে দিন রম মরিল, সে দিন সীতারাম আর চিত্তবিশ্রামে গেলেন না। এখনও তত দূর হয় নাই। যখন সীতারাম রাজা না হইয়াছিলেন, যখন তাবার স্ত্রীকে ন৷ দেখিয়াছিলেন, তখন সীতারাম রমাকে বড় ভাল বাসিতেন—নন্দার অপেক্ষাও ভাল বাসিতেন । সে ভালবাসা গিয়াছিল। কিসে গেল, সীতারাম তাহার চিন্তা কখনও করে । নাই। আজ একটু ভাবিলেন। ভাবিয়া দেখিলন-- রমার দোষ বড় বেশী নয়,—দোষ র্তার নিজের। মনে মনে আপনার উপর বড় অসন্তুষ্ট হইলেন । কাজেই মেজাজ খারাব হইয়া উঠিল। চিত্ত প্রফুল্ল করিবার জন্ত শ্রীর কাছে যাইতে প্রবৃত্তি হইল না ; কেন না, শ্রীর সঙ্গে এই আত্মগ্রানির বড় নিকট সম্বন্ধ ; রমার প্রতি তাহার নিষ্ঠুরাচরণের কারণই ত্র। শ্রীর কাছে গেলে আগুন আরও বাড়িবে। তাই স্ত্রর কাছে না গিয়া রাজা নন্দার কাছে গেলেন। কিন্তু নন্দ সে দিন একটা ভুল করিল। নন্দ বড় চটিয়াছিল। ডাকিনীই হউক আর মানুষীই হউক, কোন পাপিষ্ঠার জন্য যে রাজা নন্দাকে অবহেলা করিতেন, নন্দ তাহাতে আপনার মনকে রাগিতে দেয় নাই। কিন্তু রমাকে এত অবহেলা করায়, রমা যে মরিল, তাহাতে রাজার উপর নন্দার রাগ হইল ; কেন না,