পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় খণ্ড—ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ y So. আপনার অপমানও তাহার সঙ্গে মিশিল । রাগটা এত বেশী হইল যে, অনেক চেষ্টা করিয়াও নন্দ, সকলটুকু লুকাইতে পারিল না। -- রমার প্রসঙ্গ উঠিলে, নন্দ বলিল, “মহারাজ ! তুমিই রমার মৃত্যুর কারণ।” নন্দ এইটুকু মাত্র রাগ প্ৰকাশ করিল, আর কিছুই না । কিন্তু তাহাতেই আগুন জ্বলিল ; কেন না, ইন্ধন প্রস্তুত । একে ত আত্মগ্র নিতে সীতারামের মেজাজ খারাব হইয়াছিল—কোন মতে আপনার নিকটে আপনার সাফাই করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন, তাহার উপর নন্দার এই উচিত তিরস্কার শেলের মত বিধিল । “মহারাজ ! তুমিই রমার মৃত্যুর কারণ ” শুনিয়া রাজ গৰ্জিয় উঠিলেন : বলিলেন, “ঠিক কথা । আমিই তোমাদের মৃত্যুর কুরিণ। আমি প্রাণপাত করিয়া, আপনার রক্তে পৃথিবী ভাসাইয়। তোমাদিগকে রাজরাণী করিয়াছি--কাজেই এখন বলবে বৈ কি, আমিই তোমাদের মৃত্যুর কারণ। যখন রম, গঙ্গারামকে ডাকিয়৷ তামার মৃত্যুর কারণ হইবার চেষ্টা করিয়াছিল, কৈ তখন ত কেহ কিছু বল নাই ?” এই বলিয়। রাজা রাগ করিয়া বহিৰ্ব্বাটতে গেলেন। সেখানে চন্দ্রচূড় ঠাকুর, রাজাকে রমার জন্ত শোকাকুল বিবেচনা করিয়া, তাহাকে সান্তন করিবার জন্য নানা প্রকার . আলাপ করিতে লাগিলেন। রাজার মেজাজ তপ্ত তেলের মত ফুটি:দছিল, রাজা তাহার কথার বড় উত্তর করিলেন না। চন্দ্রচূড় ঠাকুরও একটা ভুল করিলেন। তিনি মনে করিলেন, রমার মৃত্যুর জন্তা রাজার অনুতাপ হইয়াছে, এই সময়ে চেষ্টা করিলে, যদি ডাকিনী হইতে মন ফিরে, তবে সে চেষ্টা করা উচিত। তাই চন্দ্রচূড় ঠাকুর ভূমিকা করিবার অভিপ্রায়ে বলিলেন, “মহারাজ ! আপনি যদি ছোট রাণীর প্রতি আর একটু মনোযোগী হইতেন, তা হইলে তিনি আরোগ্য লাভ করিতে পারিতেন।” জ্বলন্ত আগুন এ ফুৎকারে আরও জ্বলিয়া উঠিল । রাজা বলিলেন, “আপনারও কি বিশ্বাস যে, আমিই ছোট রাণীর মৃত্যুর কারণ ?” চন্দ্রচূড়ের সেই বিশ্বাস বটে। তিনি মনে করিলেন, “এ কথা রাজাকে স্পষ্ট করিয়া বলাই উচিত। আপনার দোষ না দেখিলে, কাহারও চরিত্র শোধন হয় না। আমি ইহার গুরু ও মন্ত্রী, আমি যদি বলিতে সাহস না করিব, তবে কে বলিবে ?” অতএব চন্দ্রচূড় বলিলেন, “তাহ এক রকম বলা যাইতে পারে।” রাজা। পারে বটে। বলুন। কেবল বিবেচনা করুন, আমি যদি লোকের মৃত্যুকামনা করিতাম, তাহা হইলে এই রাজ্যে এক জনও এত দিন টিকিত না।