পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ড দিবা-গৃহিণী প্রথম পরিচ্ছেদ পূৰ্ব্বকালে, পূর্ববাঙ্গালায় ভূষণ নামে এক নগরী ছিল। এখন উহার নাম "নো।” যখন কলিকাতা নামে ক্ষুদ্র গ্রামের কুটারবাসীরা বাঘের ভয়ে রাত্রে বাহির হইতে পারিত না, তখন সেই ভূষণায় একজন ফৌজদার বাস করিতেন। ফৌজদারের স্থানীয় গবর্ণর ছিলেন ; এখনকার স্থানীয় গবর্ণর অপেক্ষ তাহাদের বেতন অনেক বেশী ছিল। সুতরাং ভূষণ স্থানীয় রাজধানী ছিল। আজি হইতে প্রায় এক শত আশী বৎসর পূৰ্ব্বে, এক দিন রাত্রিশেষে ভূষণ নগরের একটি সরু গলির ভিতর, পথের উপর এক জন মুসলমান ফকির শুইয়াছিল। ফকির, আড় হইয়া একেবারে পথ বন্ধ করিয়া শুইয়া আছে। এমন সময়ে সেখানে এক জন পথিক আসিয়া উপস্থিত হইল। পথিক বড় দ্রুত আসিতেছিল, কিন্তু ফকির পথ বন্ধ করিয়া শুইয়া আছে দেখিয়া, ক্ষুন্ন হইয়া দাড়াইল । পথিক হিন্দু। জাতিতে উত্তররাঢ়ী কায়স্থ। তাহার নাম গঙ্গারাম দাস। বয়সে নবীন। গঙ্গারাম বড় বিপন্ন। বাড়ীতে মাতা মরে, অন্তিম কাল উপস্থিত। তাই তাড়াতাড়ি কবিরাজ ডাকিতে যাইতেছিল। এখন সম্মুখে পথ বন্ধ। সেকালে মুসলমান ফকিরেরা বড় মান্ত ছিল। খোদ আকবর শাহ ইসলাম ধৰ্ম্মে অনাস্থাযুক্ত হইয়াও এক জন ফকিরের আজ্ঞাকারী ছিলেন। হিন্দুরা ফকিরদিগকে সম্মান করিত, যাহারা মানিত না, তাহারা ভয় করিত। গঙ্গারাম সহসা ফকিরকে লঙ্ঘন করিয়া যাইতে সাহস করিলেন না। বলিলেন, “সেলাম শাহ সাহেব। আমাকে একটু পথ দিন।”