পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ড-দ্বাদশ পরিচ্ছেদ ৩৭ সে কথা থাক—এখন তা বলিতেছি না। এখন এই বেশ ছদ্মবেশস্বরূপ গ্রহণ কর না— তাতে দোষ কি ? - স্ত্রী। মাথা মুড়াইতে হইবে ? আমি সধব। সন্ন্যাসিনী। আমি মাথা মুড়াই নাই দেখিতেছ। শ্ৰী। জটা ধারণ করিয়াছ ? - সন্ন্যাসিনী। না, তাও করি নাই। তবে চুলগুলাতে কখনও তেল দিই না, ছাই মাখিয়া রাখি, তাই কিছু জট পড়িয়া থাকিবে। জী। চুলগুলি যেরূপ কুণ্ডলী করিয়া ফণা ধরিয়া আছে, আমার ইচ্ছা করিতেছে, একবার তেল দিয়া আঁচড়াইয়া বাধিয়া দিই। সন্ন্য। জন্মান্তরে হইবে,—যদি মানবদেহ পাই। এখন তোমায় সন্ন্যাসিনী সাজাইব কি ? স্ত্রী। কেবল চুলে ছাই মাখিলেই কি সাজ হইবে ? সন্ন্যা। না—গৈরিক, রুদ্রাক্ষ, বিভূতি, সব আমার এই রাঙ্গা বুলিতে আছে। সব দিব । শ্ৰী কিঞ্চিৎ ইতস্ততঃ করিয়া সম্মত হইল। তখন নিভৃত এক বৃক্ষতলে বসিয়া সেই রূপসী সন্ন্যাসিনী স্ত্রীকে আর এক রূপসী সন্ন্যাসিনী সাজাইল । কেশদামে ভস্ম মাখাইল, অঙ্গে গৈরিক পরাইল, কণ্ঠে ও বাহুতে রুদ্রাক্ষ পরাইল, সৰ্ব্বাঙ্গে বিভূতি লেপন করিল, পরে রঙ্গের দিকে মন দিয়া শ্রীর কপালে একটি চন্দনের টপ দিয়া দিল। তখন ভুবনবিজয়াভিলাষী মধুমন্মথের হ্যায় দুই জনে যাত্রা করিয়া, বৈতরণী পার হইয়া, সে দিন এক দেবমন্দিরের অতিথিশালায় রাত্রি যাপন করিল। দ্বাদশ পরিচ্ছেদ পরদিন প্রাতে উঠিয়া, খরস্রোতা * জলে যথাবিধি স্নানাহ্নিক সমাপন করিয়া ঐ ও সন্ন্যাসিনী, বিভূতি রুদ্রাক্ষাদি-শোভিত হইয়া পুনরপি, “সঞ্চারিণী দীপশিখা" দ্বয়ের ন্যায় ঐক্ষেত্রের পথ আলো করিয়া চলিল। তৎপ্রদেশবাসীরা সৰ্ব্বদাই নানাবিধ যাত্রীকে সেই

  • নদীর নাম।