পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিন্তু এই শেষ চার পংক্তিতে (‘আর মনে ক'রো আকাশে আছে এক ধ্রুব নক্ষত্র/ নদীর ধারায় আছে গতির নির্দেশ,/অরণ্যের মর্মরধ্বনিতে আছে আন্দোলনের ভাষা, আর আছে পৃথিবীর চিরকালের আবর্তন’: ঐতিহাসিক, ছাড়পত্র) কবি সুকান্ত যে আদর্শের কথা বলে গেছে তা পৃথিবীর সমস্ত মতবাদের চেয়ে প্রাচীন, সমস্ত আদর্শের চেয়েও বড়।•••

 '•••তার প্রথম দিকের অনেক রচনাতেই দলীয় শ্লোগান অতি স্পষ্ট ছিল; কিন্তু মনের বালকত্ব উত্তীর্ণ হবার সঙ্গে সঙ্গে তার আত্মবিশ্বাস আত্মপ্রকাশকে অনন্যপরতন্ত্র করে তুলেছিল।•••

(কবিকিশোর’: পরিচয় শারদীয়, ১৩৫৪)

 এ কিন্তু ভঙ্গি দিয়ে ভোলানো নয়, কবিতার গুণে দূরের মানুষকে কাছে টানা।

 সমসাময়িকদের মধ্যে যে কাজ আর কেউ পারে নি, সুকান্ত একা তা করেছে—আধুনিক বাংলা কবিতার দ্বার বহুজনের জন্যে সে খুলে দিয়ে গেছে। কবিতাবিমুখ পাঠকদের কবিতার রাজ্যে জয় ক'রে আনার কৃতিত্ব সুকান্তর। তারই সুফল আজ আমরা ভোগ করছি।

 সুকান্তর মৃত্যুর পর সুকান্তকে অনুকরণের একটা যুগ গেছে। কারো কারো এ ধারণাও হয়েছিল যে, রাজনৈতিক আন্দোলনই বুঝি সুকান্তকে তুলে ধরেছিল। সুকান্তর অক্ষম অনুকারকেরা কবিতার ভুষ্টিনাশ করে বক্তব্যকে বুলিসর্বস্ব ক'রে তুললেন। হিতে বিপরীত হল। একটা সময় এল, পাঠকেরা বেঁকে বসল-সেই পাঠকেরাই, যারা এর আগে এবং পরেও সুকান্ত পড়ে তৃপ্তি পেয়েছে।

 সুকান্তর সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলনের তোলাতুলি বা কোলাকুলির সম্পর্ক ছিল না—এটা না বোঝার জন্যেই একদল কবির মধ্যে এক সময় রাজনীতি থেকে আশাভঙ্গজনিত পালাও-পালাও রব উঠেছিল। যে যার নিজের মধ্যে তাঁরা পালিয়ে গেলেন। তাতেও শেষ পর্যন্ত তাকদের মুশকিলের আশান হয় নি।

 ভুল হয়েছিল বুঝতে। সুকান্ত রাজনীতির কাধে চড়ে নি। রাজনীতিকে নিজের করে নিয়েছিল। রাজনৈতিক আন্দোলনও সুকান্তকে দিয়েছে তাই সানন্দ স্বীকৃতি। নিজেকে নিঃশর্তে জীবনের হাতে সঁপে দেওয়াতেই স্বতোৎসারিত হতে পেরেছিল সুকান্তর কবিতা।