পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আজ যাঁরা সুকান্তর কবি প্রতিভাকে এই বলে উড়িয়ে দিতে চান যে, সুকান্তর কবিতায় শ্লোগান ছিল—তাঁদের বলতে চাই, সুকান্তর কবিতায় শ্লোগান নিশ্চয়ই ছিল। কবিতার জাত যাবার ভয়ে শ্লোগানগুলোকে রেখে ঢেকেও সে ব্যবহার করে নি। হাজার হাজার কণ্ঠে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত যে ভাষা হাজার হাজার মানুষের নানা আবেগের তরঙ্গ তুলেছে, তাকে কবিতায় সাদরে গ্রহণ করতে পেরেছিল বলেই সুকান্ত সার্থক কবি। কবিতায় রাজনীতি থাকলেই যাদের কাছে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়, তারা ভুলে যান—অরাজনৈতিক কবিতায়ও জিগির কিছু কম নেই। আসলে অপত্তিটা বোধহয় শ্লোগানে নয়, শ্লোগান বিশেষে-রাজনীতিতে নয়, রাজনীতি বিশেষে। তাঁদের কাছে অনুরোধ, কবিতার দোহাই না তুলে মনের কথাটা খুলে বলুন।

 কবিতায় সুকান্তই যে শেষ কথা, তার পথই যে একমাত্র পথ—মতিভ্রম হলে কেউ সে কথা বলবে না। সাহিত্যে অনুকাবকের স্থান নেই, এ তো সবাই জানে। সুকান্তর কবিতা সুকান্তকে ছাড়া আর কাউকেই মানাবে না। সুকান্তর পরবর্তী যে কবি সুকান্ত থেকে তফাত করবে, নিজেকে ছাড়িয়ে নেবে—সে আমাদের প্রশংসা পাবে। কেননা আত্মমর্যাদা না থাকলে অন্যকে মর্যাদা দেওয়া যায় না। সুকান্তকে ছাড়িয়ে যাওয়াই হবে সুকান্তকে সম্মান জানানো।


 আমার এ ভূমিকা, বিশেষ করে, সুকান্তর আজকের পাঠকদের জন্যে। আমি সমালোচক নই। বাংলা সাহিত্যে সুকান্তর কী দান, কোথায় তার স্থান—সে সব স্থির করবার জন্যে যোগ্য ব্যক্তিরা আছেন। সুকান্ত-সমগ্র পাঠকদের হাতে ধরিয়ে দিয়েই আমি খালাস।

 যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, শেষ করবার আগে সেই কথাতেই আবার ফিরে আসতে চাই। মনে রাখবেন, সুকান্তর বয়স আজ একচল্লিশ নয়। আজও একুশ।

 সুকান্তর জন্ম বাংলা ১৩৩৩ সালের ৩০শে শ্রাবণ। সুকান্তর বাবা স্বর্গত নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য। কলকাতায় কালীঘাটে মাতামহের ৪২, মহিম হালদার স্ট্রিটের বাড়িতে সুকান্তর জন্ম। সুকান্তর জীবনের অনেক কথাই সুকান্তর ছোট ভাই অশোক ভট্টাচার্যের লেখা কবি-সুকান্ত পড়ে জেনে নিতে