পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পারবেন। আমি শুধু তার একুশ বছরের জীবনের কয়েকটা দিক মোটা দাগে তুলে ধরতে চাই।

 সুকান্তদের পৈতৃক ভিটে ছিল ফরিদপুর জেলায়। সুকান্তর জ্যাঠামশাই ছিলেন সংস্কৃতে পণ্ডিত। বাড়িতে ছিল সংস্কৃত পঠনপাঠনেব আবহাওয়া। পরে এই প্রাচীন পন্থার পাশাপাশি উঠতি বয়সীদের আধুনিক চিন্তা-ভাবনার একটা পরিমণ্ডলও গড়ে ওঠে। সুকান্ত ছেলেবেলায় মা-র মুখে শুনেছে কাশীদাসী মহাভারত আর কৃত্তিবাসী রামায়ণ। সুকান্তর বাবা আর জ্যাঠামশাই অসহায় অবস্থা থেকে নিজেদের পুরুষকারের জোরে বিদেশ বিভুঁইতে এসে বড় হয়েছিলেন। বইয়ের প্রকাশ ব্যবসা ছাড়াও সুকান্তর বাবা আর জ্যাঠামশাইয়ের ছিল যজমানি আর পণ্ডিত বিদায়ের আয়। বেলেঘাটায় নিজেদের বাড়ি ছেড়ে পৃথক হওয়ার আগে পর্যন্ত যৌথ পরিবার স্বচ্ছলভাবেই চলত। সুকান্তর মাতামহ পণ্ডিত বংশের মানুষ হয়েও প্রাচীন সংস্কার থেকে মুক্ত ছিলেন। এরই ভেতর দিয়ে বহু আত্মীয়স্বজনের ভিড়ে হেসে খেলে কেটেছিল সুকান্তর শৈশব। ন-দশ বছর বয়স থেকেই সে ছড়া লিখে বাড়িতে কবি হিসেবে নাম কিনেছিল। লেখার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলত নানারকমের বই পড়া। সুকান্ত ছোট থাকতেই ক্যান্সার রোগে সুকান্তর মা মারা গেলেন। ছেলেবেলা থেকেই সুকান্তর ছিল অন্তর্মুখী মন। ইস্কুলে সুকান্ত বন্ধু হিসেবে পেয়েছিল পরবর্তীকালের যশস্বী কবি অরুণাচল বসুকে। অরুণাচলের মা সরলা বসুর ('জলবনের কাব্য’র লেখিকা) প্রভাব সুকান্তর জীবনে কম নয়। খেলার মধ্যে তার প্রিয় ছিল ব্যাডমিণ্টন আর দাবা। পরোপকারে ছেলেবেলা থেকেই দল বাঁধায় তার ছিল প্রবল উৎসাহ। শহরে মানুষ হ'লেও সুকান্ত ছিল গাছপালা মাঠ আকাশের ভক্ত।

 পরের জীবন মোটামুটি তার কবিতায়ই পাওয়া যাবে। সুকান্তর কবিতা কখনই তার জীবন থেকে আলাদা নয়।

 তবু সুকান্তর একটা নতুন দিক ‘সুকান্ত-সমগ্র’তে তার চিঠিপত্রে পাঠকদের কাছে এই প্রথম ধরা পড়বে। যখন তারা পড়বেন:

 ‘বাস্তবিক, আমি কোথাও চলে যেতে চাই, নিরুদ্দেশ হয়ে মিলিয়ে যেতে চাই...কোনো গহন অরণ্যে কিংবা অন্য যে কোনো নিভৃততম প্রদেশে, যেখানে মানুষ নেই, আছে কেবল সূর্যের আলোর মতো স্পষ্টমনা হিংস্র আর নিরীহ জীবের আর অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ।•••