পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অনশনে কাটাচ্ছে। যশোদার যা কিছু গোপন সম্বল ছিল তাই দিয়ে গত দু'দিন সে তিনুর ক্ষুধাকে শান্ত করেছে আর কোলের ছেলেটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে বুকের পানীয় দিয়ে। কিন্তু অজি? আজ তার সম্বল ফুরিয়েছে, বক্ষস্থিত পানীয়ও নিঃশেষিত; আর নিজে সে তীব্র বুভুক্ষায় শীর্ণ এবং দুর্বল। অনশন ক'রে সে নিজের প্রতিই যে শুধু অবিচার করেছে, তা নয়, অবিচার করেছে আর একজনের প্রতি সে আছে তার দেহে, সে পুষ্ট হচ্ছে তার রক্তে, সে প্রতীক্ষা করছে এই আলো-বাতাসময় পৃথিবীতে মুক্তির। তার প্রতি যশোদার দায়িত্ব কি পালিত হল? ভয়ে এবং উৎকণ্ঠায় সে চোখ বুজলে, কোলের শিশুটাকে নিবিড় করে চেপে ধরল আতঙ্কিত বুকে। যশোদা ভেবে পায় না কী প্রয়োজন এই আসন্ন দুর্ভিক্ষের ভয়ে ভীত পৃথিবীতে একটি নতুন শিশুর জন্ম নেবার? অথচ তার আত্মপ্রকাশের দিন নিকটবর্তী।

 হারু ঘোষ নীলুর অগ্রজ এবং সে এই বাড়িতেই পৃথক ভাবে থাকে, চাকরী করে চটকলে, মাইনে পঁচিশ টাকা। নীলুর কাছে সে অবস্থাপন্ন, তাই নীলু তাকে ঈর্ষার চোখে দেখে এবং সম্বোধন করে ‘বড়লোক' বলে। দিন সাতেক আগে তিমুর কাছে ঠিক এই রকম উৎপীড়িত হয়ে যশোদা তার সঙ্গতি থেকে একসের চাল কেনবার মতো পয়সা নিয়ে চুপি চুপি বেরিয়ে পড়েছিল কণ্ট্রোল্ড দোকানের দিকে। এই প্রথম সে একাকী পথে বেরুল। লজ্জায়, সংকোচে, অনভ্যাসের জড়তায় শোচনীয় হয়ে উঠল তার অবস্থা। সে আরো সংকটাপন্ন হল যখন কোলের শিশুটা রাস্তার মাঝখানে চীৎকার করে কেঁদে উঠল। তবু সে ঘোমটার অন্তরালে আত্মরক্ষা করতে করতে কণ্ট্রোল্ড দোকানে উপস্থিত হয়েছিল। কিন্তু গিয়ে দেখল সেখানে তার মতো ক্ষুধার্ত নারী একজন নয়, দু’জন নয়, শত-শত, এবং ক্ষুধার তাড়নায় তাদের লজ্জা নেই, দ্বিধা নেই, আব্রু নেই, সংযম নেই, নেই কোনো কিছুই; শুধু আছে ক্ষুধা আর আছে সেই ক্ষুধা নিবৃত্তির আদিম

৩৫৬