পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হবার আগেই সেই হাতেই ভর করে গাছের তলায় এসে বসত। এমনি করে কেটেছে পাঁচ বছর।

 কিন্তু দুর্ভিক্ষ এল অবশেষে। লোকের আলাপ-আলোচনা আর তার মলে-ধরা কাপড়ের শূন্যতা বৃদ্ধকে সে-খবর পৌছে দিল যথাসময়ে।

 —কুড়ি টাকা মণ দরেও যদি কেউ আমাকে চাল দেয় তো আমি এক্ষুণি নগদ কিনতে রাজি আছি পাঁচ মণ—বুঝলে হে—

 উত্তরে আর একটি লোক কি বলে তা শোনা যায় না, কারণ তারা এগিয়ে যায় অনেক দূর —

 —আরে ভাবতিছ কী ভজহরি, এবার আর বেী-বেটা নিযে বাঁচতি আবে না—

 —তা যা বলিছ নীলমণি •••

 বৃদ্ধ উৎকর্ণ হয়ে ওঠে, কিন্তু আর কিছু শোনা যায় না। শুধু একটা প্রশ্ন তার মন জুড়ে ছটফট করতে থাকে—কেন, কেন? বৃদ্ধের ইচ্ছা করে একজনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করতে—কেন চালের মণ তিরিশ টাকা, কেন যাবে না বাঁচা?—কিন্তু তার এই প্রশ্নের উত্তর দেবে কে? কে এই অন্ধ বৃদ্ধকে বোঝাবে পৃথিবীর জটিল পরিস্থিতি? শুধু বৃদ্ধের মনকে ঘিরে নেমে আসে আশংকার কালো ছায়া। আর দুর্দিনের দুর্বোধ্যতায সে উন্মাদ হয়ে ওঠে দিনের পর দিন। অজন্ম নয়. প্লাবন নয়। তবু দুর্দিন, তবু দুর্ভিক্ষ? শিশুর মতো সে অবুঝ হয়ে ওঠে; জানতে চায় না, বুঝতে চায় না—কেন দুর্দিন, কেন দুর্ভিক্ষ—শুধু সে চায় ক্ষুধার আহার্য। কিন্তু দিনের শেষে যখন কাপড় হাতড়ে সে শুকনো গাছের পাতা ছাড়া আর কিছুই পায় না, তখন সারাদিনের নিস্তব্ধতা ভেঙে তার আহত অবরুদ্ধ মন বিপুল বিক্ষোভে চিৎকার ধরে উঠতে চায়, কিন্তু কণ্ঠস্বরে সে-শক্তি কোথায়? খানিক পরে সেই নরম হাতে তার অবসন্ন শিথিল হাত নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গে তুলে দেয়। আর ক্রমশ অন্ধকার তাদের গ্রাস করে।

৩৬৬