পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাটার পর অবশেষে সে ঘুমিয়ে পড়ল। মাঝে মাঝে চমকে উঠে সে হাতড়াতে লাগল, আর খুঁজতে লাগল একটা কোমল নির্ভরযোগ্য হাত। আস্তে আস্তে একটা আতঙ্ক দেখা দিল—অপরিসীম বেদনা ছড়িয়ে পড়ল তার মনের ফসলকাটা মাঠে। বহুদিন পরে দেখা দিল তার অন্ধতাজনিত অক্ষমতার জন্যে অনুশোচন। রোরুদ্যমান মনে কেবল একটা প্রশ্ন থেকে থেকে জ্বলে উঠতে লাগল: পাঁচ বছর আগে যে এইখানে এনে বসিয়েছে পাঁচ বছর পরে এমন কী কারণ ঘটেছে যার জন্যে সে এখান থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে না?—তার অনেক প্রশ্নের মতোই এ প্রশ্নেরও জবাব মেলে না। শুধু থেকে থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণা তাকে অস্থির করে তোলে।

 তারপর আরো দুদিন কেটে গেল। চিৎকার করে ভিক্ষা চাইবার ক্ষমতা আর নেই, তাই সেই পয়সাগুলো আঁকড়ে ধরে সে ধুকতে থাকল। আর দু-চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল ফোঁটা ফোঁটা জল। দু-হাতে পেট চেপে ধরে তার সেই গোঙানী, কারো কানে পৌছুলো না। কারণ কারুর কাছেই এ-দৃশ্য নতুন নয়। আর ভিখিরীকে করুণা করাও তাদের কাছে অসম্ভব। যেহেতু দুর্ভিক্ষ কত গভীর, আর কত ব্যাপক!

 বিকেলের দিকে যখন সে নিঃশব্দে লুটিয়ে পড়ল অবসন্ন হয়,তখন একটা মিলিত আওয়াজ তার দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসতে লাগল। ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হল। তার অতি কাছে হাজার হাজার কণ্ঠে ধ্বনিত হতে লাগল: অন্ন চাই—বস্ত্র চাই:••। হাজার হাজার মিলিত পদধ্বনি আর উন্মত্ত আওয়াজ তার অবসন্ন প্রাণে রোমাঞ্চ আনল অদ্ভুত উন্মাদনায় সে কেঁপে উঠল থরথর করে। লোকের কথাবার্তায় বুঝল: তারা চলেছে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে চাল আনতে। অন্ধ বিস্মিত হল—তারই প্রাণের কথা হাজার হাজার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে তারই নিঃশব্দ চিৎকার এদের চিৎকারে মূর্ত হচ্ছে। তা হলে এত লোক, প্রত্যেকেই তার মতো ক্ষুধার্ত, উপবাসখিন্ন? একটা অজ্ঞাত

৩৬৮