পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সেদিন রাত্রে সুরেন মদ খেল; প্রচুর মদ। তারপর রামচরণকে অনুসরণ করল। যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়াই রামচরনের কাজ। সে আজ সুরেনকে পৌঁছে দিল সৌখিন ভদ্রসমাজ থেকে ঘা-খাওয়া ছোটলোকের সমাজে।


দরদী কিশোর

 দোতলার ঘরে পড়ার সময় শতদ্রু আজকাল অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। জানালা দিয়ে সে দেখতে পায় তাদের বাড়ির সামনের বস্তিটার জন্যে যে নতুন কণ্ট্রোলের দোকান হয়েছে, সেখানে নিদারুণ ভীড়, আর চালের জন্যে মারামারি কাটাকাটি। মাঝে মাঝে রক্তপাত আর মূর্ছিত হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। সেইদিকে চেয়ে থাকতে থাকতে সে স্কুলের পড়া ভুলে যায়, অন্যায় অত্যাচার দেখে তার রক্ত গরম হয়ে ওঠে, তবু সে নিরুপায়, বাড়ির কঠোর শাসন আর সতর্কদৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে কিছু করা অসম্ভব। যারা চাল না পেয়ে ফিরে যায় তাদের হতাশায় অন্ধকার মুখ তাকে যেন চাবুক মারে, এদের দুঃখ মোচনের জন্য কিছু করতে শতদ্রু উৎসুক হয়ে ওঠে, চঞ্চল হয়ে ওঠে মনে প্রাণে। তারই সহপাঠী শিবুকে সে পড়া ফেলে প্রতিদিন চালের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দ্যাখে। বেচারার আর স্কুলে যাওয়া হয় না, কোনো কোনো দিন চাল না পেয়েই বাড়ি ফেরে, আর বৃদ্ধ বাপের গালিগালাজ শশানে, আবার মাঝে মাঝে মারও খায়। ওর জন্যে শতদ্রুর কষ্ট হয়। অবশেষে ঐ বস্তিটার কষ্ট ঘোচাতে শতদ্রু একদিন কৃতসংকল্প হল।

 কিছুদিনের মধ্যেই শতদ্রুর সহপাঠীরা জানতে পারল শতক্রর পরিবর্তন হয়েছে। সে নিয়মিত খেলার মাঠে আসে না, কারুর কাছে

৩৭৩