পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘরে যেতে দেখেছিলাম।’ নরেন একটু ঠাট্টার হাসি হেসে বলল, “দেখেছিলে তো বলে দিলে না কেন? সাহসে বুঝি কুলোয় নি? কথায় কথায় রাগারগি হয়ে শেষে নরেন যেই রাজেনকে মারতে যাবে এমন সময় হঠাৎ পা পিছলিয়ে সে রেলিঙের উপর পড়ে গেল। নরেনের প্রকাণ্ড শরীর, রেলিংটা তার ভার সামলাতে পারল না। রেলিঙ ভেঙে সে একেবারে খাড়া সিঁড়ি দিয়ে ঘুরপাক খেয়ে পড়ছে দেখে সবাই চেঁচিয়ে উঠল। ঠিক সেই সময়ে সুধীর সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছিল; সে বইটই ফেলে দৌড়ে নরেনকে ধরে ফেলল। কিন্তু তার ভার সুধীর সইতে পারবে কেন? দুজনে জড়াজড়ি করে সিঁড়ির নীচে পড়ে গেল! নরেন পড়ল উপরে সুধীর পড়ল নীচে। একটু বাদেই নরেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠল কিন্তু সুধীর আর ওঠেই না! সবাই মিলে ধরাধরি করে তাকে ঘরে আনল। ডাক্তার এসে বললেন, ‘একটি পা ভেঙেছে দেখা যাচ্ছে, জ্ঞান না হলে আর কিছু বলতে পারছি না।’ মাসখানেক ভুগে সুধীর সেরে উঠল, কিন্তু খোঁড়া পা আর সারল না।

 “এই একমাসে নরেন একেবারে বদলে গেল—যতদিন সুধীর বিছানায় পড়েছিল, নরেন প্রাণপণে তার সেবা করত, নিজে বাজার থেকে তার জন্য ফল কিনে আনত, কত সময়ে রাত জেগে তাকে বাতাস করত—দুবেলা ডাক্তারের বাড়ি যাওয়া-আসা করত। সেই অবধি তাদের একেবারে গলাগলি ভাব।”

সন্দেশ—বৈশাখ, ১৩২৩


আশ্চর্য কবিতা

 চণ্ডীপুরের ইংরাজি স্কুলে আমাদের ক্লাশে একটি নূতন ছাত্র আসিয়াছে। তার বয়স বারো-চোদ্দোর বেশি নয়। সে স্কুলে আসিয়া প্রথম দিনই সকলকে জানাইল, “আমি পোইট্রি লিখতে পারি!” এ কথা শুনিয়া ক্লাশসুদ্ধ সকলে অবাক হইয়া গেল; কেবল দু-একজন হিংসা করিয়া বলিল, “আমরাও ছেলেবেলায় ঢের ঢের কবিতা লিখেছি।” নূতন ছাত্রটি বোধ হয় ভাবিয়াছিল, সে কবিতা লিখিতে পারে, শুনিয়া ক্লাশে খুব হুলস্থূল পড়িয়া যাইবে, এবং কবিতার নমুনা শুনিবার জন্য সকলে হাঁ হাঁ করিয়া উঠিবে। যখন সেরূপ কিছুরই লক্ষণ দেখা গেল না, তখন বেচারা, যেন আপন মনে কি কথা বলিতেছে, এরূপভাবে, যাত্রার মতো সুর করিয়া একটা কবিতা আওড়াইতে লাগিল—

“ওহে বিহঙ্গম তুমি কিসের আশায়
বসিয়াছ উচ্চ ডালে সুন্দর বাসায় ?
নীল নভোমণ্ডলেতে উড়িয়া উড়িয়া
কত সুখ পাও, আহা ঘুরিয়া ঘুরিয়া !
যদ্যপি থাকিত মম পুচ্ছ এবং ডানা
উড়ে যেতাম তব সনে নাহি শুনে মানা”—

ইস্কুলের গল্প
৯৯