পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জনকে বললেন, “সমাস কর।” সে বেচারা ভয় পেয়ে বলল, যোগ্য ছিল দাস—হল যোগ্যদাস—অর্থাৎ” পণ্ডিতমশাই বললেন, “থাক, থাক আর বলতে হবে না।” এমনি করে জগ্যিদাস আমাদের ক্লাশে ভতি হল। দুদিন না যেতেই বোঝা গেল যে, জগ্যিদাসের আর কোনো বিদ্যে থাকুক আর নাই থাকুক, আজগুবি গল্প বলবার ক্ষমতাটি খুব অসাধারণ। একদিন সে স্কুলে দেরি করে এসেছিল, কারণ জিজ্ঞাসা করাতে সে বলল, “রাস্তায় আসতে পঁচিশটা কুকুর হা ঁহা ঁকরে আমায় তেড়ে এসেছিল। আমি ছুটতে ছুটতে, হাঁপাতে হাঁপাতে, সেই কুণ্ডুদের বাড়ি পর্যন্ত চলে গেছিলাম।” পঁচিশটা দূরের কথা, দশটা কুকুরও আমরা একসঙ্গে চোখে দেখি নি, কাজেই কথাটা মাস্টারমশাইও বিশ্বাস করেন নি। তিনি বললেন, “এত মিছে কথা বলতে শিখলে কার কাছে?” জগ্যিদাস বলল, “আজ্ঞে, মামার কাছে।” সেদিন হেডমাস্টারের ঘরে জগ্যিদাসের পড়েছিল, সেখানে কি হয়েছিল আমরা জানি না, কিন্তু জগ্যিদাস যে খুশি হয় নি সেটা বেশ বোঝা গেল। কিন্তু সত্যি হোক আর মিথ্যে হোক, তার গল্প বলার বাহাদুরি ছিল। সে যখন বড়ো-বড়ো চোখ করে, গম্ভীর গলায়, তার মামাবাড়ির ডাকাত ধরার গল্প বলত তখন বিশ্বাস করি আর না করি, শুনতে শুনতে আমাদের মুখ আপনা হতেই হা ঁহয়ে আসত। | জগ্যিদাসের মামার কথা আমাদের ভারি আশ্চর্য ঠেকত। তাঁর গায়ে নাকি যেমন জোর, তেমনি অসাধারণ তার বুদ্ধি। তিনি যখন ‘রামভজন’ বলে চাকরকে ডাক দিতেন, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব পুলিশ নিয়ে ছুটে আসত। কুস্তি বল, লাঠি বল, ক্রিকেট বল, ফুটবল বল, সবটাতেই তাঁর সমান দখল। প্রথমটা আমরা বিশ্বাস করি নি, কিন্তু একদিন সে তার মামার ফোটো এনে দেখাল। দেখলাম, পালোয়ানের মতো চেহারা বটে! একেক বার দুটি হত আর জগ্যিদাস তার মামাবাড়ি যেত, আর এসে যে-সব গল্প বলত তা কাগজে ছাপবার মতো। একদিন ছুটি থেকে ফিরবার সময় স্টেশনে আমার সঙ্গে জগ্যিদাসের দেখা, একটা গাড়ির মধ্যে মাথায় পাগড়িবাধা চমৎকার জাদরেল চেহারার একটি কোন দেশী ভদ্রলোক ইলের গল্প ১০৫ স. -২-১৩