পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমি খানিক ভেবে বললাম, “তা হলে তোমায় এখন কি বলে ডাকব? তুমি তো সত্যিকারের বেড়াল নও, আসলে তুমি হচ্ছ রুমাল।”

বেড়াল বলল, “বেড়ালও বলতে পার, রুমালও বলতে পার, চন্দ্রবিন্দুও বলতে পার।”

আমি বললাম, “চন্দ্রবিন্দু কেন?”

শুনে বেড়ালটা “তাও জানো না?” বলে এক চোখ বুজে ফ্যাচ্‌ফ্যাচ্ করে বিশ্রীরকম হাসতে লাগল। আমি ভারি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। মনে হল, ঐ চন্দ্রবিন্দুর কথাটা নিশ্চয় আমার বোঝা উচিত ছিল। তাই থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি বলে ফেললাম, “ও হ্যাঁ-হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি।”

বেড়ালটা খুশি হয়ে বলল, “হ্যাঁ, এ তো বোঝাই যাচ্ছে—চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের তালব্য শ, রুমালের মা—হল চশমা। কেমন, হল তো?”

আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না, কিন্তু পাছে বেড়ালটা আবার সেইরকম বিশ্রী করে হেসে ওঠে, তাই সঙ্গে সঙ্গে হুঁ-হুঁ করে গেলাম। তার পর বেড়ালটা খানিকক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠল, “গরম লাগে তো তিব্বত গেলেই পার।”

আমি বললাম, “বলা ভারি সহজ, কিন্তু বললেই তো আর যাওয়া যায় না?”

বেড়াল বলল, “কেন? সে আর মুশকিল কি?”

আমি বললাম, “কি করে যেতে হয় তুমি জানো?”

বেড়াল এক গাল হেসে বলল, “তা আর জানি নে? কলকেতা, ডায়মণ্ডহারবার, রানাঘাট, তিব্বত, ব্যাস্! সিধে রাস্তা, সওয়া ঘণ্টার পথ, গেলেই হল।”

আমি বললাম, “তা হলে রাস্তাটা আমায় বাতলে দিতে পার?”

শুনে বেড়ালটা হঠাৎ কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। তার পর মাথা নেড়ে বলল, “উঁহু, সে আমার কর্ম নয়। আমার গেছোদাদা যদি থাকত, তা হলে সে ঠিক-ঠিক বলতে পারত।”

আমি বললাম, “গেছোদাদা কে? তিনি থাকেন কোথায়?”

বেড়াল বলল, “গেছোদাদা আবার কোথায় থাকবে? গাছে থাকে।” আমি বললাম, “কোথায় গেলে তার সঙ্গে দেখা হয়?”

বেড়াল খুব জোরে মাথা নেড়ে বলল, “সেটি হচ্ছে না, সে হবার জো নেই।”

আমি বললাম, “কিরকম?”

বেড়াল বলল, “সে কিরকম জানো? মনে কর, তুমি যখন যাবে উলুবেড়ে তার সঙ্গে দেখা করতে, তখন তিনি থাকবেন মতিহারি। যদি মতিহারি যাও, তা হলে শুনবে তিনি আছেন রামকিষ্টপুর। আবার সেখানে গেলে দেখবে তিনি গেছেন কাশিমবাজার। কিছুতেই দেখা হবার জো নেই।”

আমি বললাম, “তা হলে তোমরা কি করে দেখা কর?”

বেড়াল বলল, “সে অনেক হাঙ্গাম। আগে হিসেব করে দেখতে হবে, দাদা কোথায় কোথায় নেই, তার পর হিসেব করে দেখতে হবে, দাদা, কোথায় কোথায় থাকতে পারে, তার পর দেখতে হবে, দাদা এখন কোথায় আছে। তার পর দেখতে হবে, সেই হিসেব মতো যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছবে, তখন দাদা কোথায় থাকবে। তার পর দেখতে হবে—”

১০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী: ২