পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিয়া ফেলে, এ কথাটা চট করিয়া বিশ্বাস করা শক্ত। কিন্তু অনুসন্ধান করিয়া দেখা গিয়াছে যে পৃথিবীর নানাজায়গায় নানা জাতীয় গাছ এই শিকারী-বিদ্যা শিখিয়াছে। তাহারা যে শখ করিয়া পোকা খাওয়া অভ্যাস করিয়াছে তাহা নয়, ঠেলায় পড়িয়াই ঐরূপ করিতে বাধ্য হইয়াছে! অনেক শিকারী গাছের বাস এমন স্যাৎসেতে জায়গায় এবং সেই-সকল জায়গা গাছের পক্ষে এত অস্বাস্থ্যকর যে সেখানে তাহারা তাহাদের শরীর রক্ষার উপযোগী মাল-মসলা ভালো করিয়া জোগাড় করিতে পারে না। এরূপ অবস্থায়, দু-একটা পোকা মাছি বা ফড়িং যদি তাহারা খাইতে না পারিত তবে তাহদের বাঁচিয়া থাকাই মুস্কিল হইত।

 আগেই বলিয়াছি, শিকারী গাছ নানারকমের আছে। ইহাদের শিকার ধরিবার জায়গাও নানারকম। কোনো কোনো গাছের পাতায় মাছি বা পোকা বসিলে পাতাগুলি আস্তে আস্তে গুটাইয়া যায়। মাছি বেচারা কিছুই জানে না, নিশ্চিন্ত মনে পাতার রস খাইতেছিল, হঠাৎ দেখে চারিদিকে ঘেরা, তাহার মধ্যে সে বন্দী| পাতার গায়ে লোমের মতো সরু সরু কাটা, তাহারই মুখে আঠার মতো রস লাগানো থাকে, সেই রসে আটকাইয়া শিকারের পলাইবার আরো অসুবিধা হয়। শুধু তাহাই নহে, পাতা গুটাইয়া গেলে পরে সেই-সকল কাঁটার মুখ হইতে একরকম তীব্র হজমি রস বাহির হইতে থাকে, তখন পোকাটা যতই ছট্‌ফট্‌ করে, ততই আরো বেশি করিয়া রস বাহির হয়। তাহাতেই শিকার মরিয়া শেষে হজম হইয়া যায়। তার পর আপনা হইতেই আবার পাতা খুলিয়া যায়। জলের মধ্যে একরকম গাছ থাকে, তাহার সাদা ফুল, জলের ধারে একটা খুব রঙচঙে গাছ হয়, তাহার পাতাগুলির চেহারা কতকটা কদম ফুল গোছের। আর একরকমের গাছ আছে তাহাতে ঠিক যেন মোচার খোলের মতো পাতা সাজানো। এই সবগুলিই একপ্রকারের শিকারী গাছ এবং ইহাদের শিকার ধরিবার কায়দাও প্রায় একরকম। মনে কর, একটা মস্ত পোকা ঐ কদম ফুলের মতো গাছটিতে উঠিয়াছে আর একটু পরেই গাছের পাতাগুলি ওটাইয়া মাঝখানে আসিয়া মিলিবে—একটি ফুটন্ত ফুল মুড়িয়া আবার কুঁড়ি হইয়া গেলে যেমন হয়, সেইরাপ। তখন পোকা বেচারার আর পলাইবার পথ থাকিবে না।

 আর-এক রকমের অদ্ভূত গাছ আছে, এক-একটা পাতার আগায় গোলাপি রঙের কী একটা জিনিস, তাহার চারদিকে কাঁটা। এই জিনিসগুলি Fly-trap (মাছি-মারা ফাঁদ)। এক-একটা ফাঁদ যেন মাঝখানে কব্জা দিয়া আটকানো, বইয়ের মতো খোলে আবার বন্ধ হয়। কোনো পোকা হয়তো পাতায় ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, কোনো বিপদের চিহ্নও নাই; ঘুরিতে ঘুরিতে সে ঐ ফাঁদের মধ্যে আসিয়া উপস্থিত। হয়তো দূরে থাকিয়া তাহার ঐ রঙটা খুব পছন্দ হইয়াছিল—তাই সে দেখিতে আসিল ব্যাপারখানা কি। কিন্তু সে তো জানে না যে ফাঁদের গায়ে সরু সূতার মতো কি লাগানো রহিয়াছে, তাহাতে ছুইলেই ফাঁদ বন্ধ হইয়া যায়। সে যেমন একটি সূতায় পা অথবা ডানা লাগাইয়াছে অমনি—খট্‌! ফাঁদ ছুটিয়া একেবারে বেমালুম বন্ধ হইয়া গেল। এখানে আর আঠার দরকার নাই, কারণ ফাঁদটি রীতিমতো মজবুত এবং খুব চট্‌পট্‌ কাজ সারে। আর-এক

নানা নিবন্ধ
১৪৯