পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তার পর হুঁকোটাকে দুরবীনের মতো করে চোখের সামনে ধরে অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার পর পকেট থেকে কয়েকখানা রঙিন কাঁচ বের করে তাই দিয়ে আমায় বার বার দেখতে লাগল। তার পর কোত্থেকে একটা পুরনো দরজির ফিতে এনে সে আমার মাপ নিতে শুরু করল, আর হাঁকতে লাগল, “খাড়াই ছাব্বিশ ইঞ্চি, হাতা ছাব্বিশ ইঞ্চি, আস্তিন ছাব্বিশ ইঞ্চি, ছাতি ছাব্বিশ ইঞ্চি, গলা ছাব্বিশ ইঞ্চি।”

আমি ভয়ানক আপত্তি করে বললাম, “এ হতেই পারে না। বুকের মাপও ছাব্বিশ ইঞ্চি, গলাও ছাব্বিশ ইঞ্চি? আমি কি শুওর?”

বুড়ো বলল, “বিশ্বাস না হয়, দেখ।”

দেখলাম ফিতের লেখা-টেখা সব উঠে গিয়েছে, খালি ২৬ লেখাটা একটু পড়া যাচ্ছে, তাই বুড়ো যা কিছু মাপে সবই ছাব্বিশ ইঞ্চি হয়ে যায়।

তার পর বুড়ো জিজ্ঞাসা করল, “ওজন কত?”

আমি বললাম, “জানি না!”

বুড়ো তার দুটো আঙুল দিয়ে আমায় একটুখানি টিপে-টিপে বলল, “আড়াই সের।”

আমি বললাম, “সেকি, পট্‌লার ওজনই তো একুশ সের, সে আমার চাইতে দেড় বছরের ছোটো।”

কাকটা অমনি তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “সে তোমাদের হিসেব অন্যরকম।”

বুড়ো বলল, “তা হলে লিখে নাও—ওজন আড়াই সের, বয়েস সাঁইত্রিশ।”

আমি বললাম, “দূৎ। আমার বয়স হল আট বছর তিনমাস, বলে কিনা সাঁইত্রিশ।”

বুড়ো খানিকক্ষণ কি যেন ভেবে জিজ্ঞাসা করল, “বাড়তি না কমতি?”

আমি বললাম, “সে আবার কি?”

বুড়ো বলল, “বলি বয়েসটা এখন বাড়ছে না কমছে?”

আমি বললাম, “বয়েস আবার কমবে কি?”

বুড়ো বলল, “তা নয় তো কেবলই বেড়ে চলবে নাকি? তা হলেই তো গেছি। কোনদিন দেখব বয়েস বাড়তে বাড়তে একেবারে ষাট সত্তর আশি বছর পার হয়ে গেছে। শেষটায় বুড়ো হয়ে মরি আর কি।”

আমি বললাম, “তা তো হবেই। আশি বছর বয়েস হলে মানুষ বুড়ো হবে না।”

বুড়ো বলল, “তোমার যেমন বুদ্ধি! আশি বছর বয়েস হবে কেন? চল্লিশ বছর হলেই আমরা বয়েস ঘুরিয়ে দিই। তখন আর একচল্লিশ বেয়াল্লিশ হয় না—উনচল্লিশ, আটত্রিশ, সাঁইত্রিশ করে বয়েস নামতে থাকে। এমনি করে যখন দশ পর্যন্ত নামে তখন আবার বয়েস বাড়তে দেওয়া হয়। আমার বয়েস তো কত উঠল নামল আবার উঠল, এখন আমার বয়েস হয়েছে তেরো।” শুনে আমার ভয়ানক হাসি পেয়ে গেল।

কাক বলল, “তোমরা একটু আস্তে-আস্তে কথা কও, আমার হিসেবটা চট্‌পট্ সেরে নি।”

বুড়ো অমনি চট্ করে আমার পাশে এসে ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে ফিসফিস্ করে বলতে লাগল, “একটি চমৎকার গল্প বলব। দাঁড়াও একটু ভেবে নি।” এই বলে তার হুঁকো

হ য ব র ল
১৩