পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সূতায় মাড় মাখানো, বেশি মাড় চেঁচে ফেলে দেওয়া বাতাস দিয়ে তাড়াতাড়ি সূতাকে শুখানো,—এ-সবই কলে হয়। তার পর তাতে চড়াবার জন্য সেই সুতাকে গুছিয়ে ঠিক করে। একে বলে ‘ব’ তোলা। এ-কাজটা হয়ে গেলে তার পর কাপড় বোনা হয়। আগের সব কাজ যত সহজে কলে হয়, কাপড় বোনা তত সহজে হয় না। টানা’র সূতার টান যদি একটু বেশি হয়ে যায়, অমনি পট করে সূতা ছিড়ে যায়। তখনই তাঁত থামিয়ে সুতা জোড়া দিয়ে দিতে হয়।

 তাঁত যখন চলে তখন বড় মজার দেখায়। টানার সুতা উঠছে আর নামছে, আর তার ফাঁকের ভিতর দিয়ে পড়েনের সূতার ‘মাকু ঠকঠক করে ছুটে যাচ্ছে আর আসছে, —ঠিক যেন একটা ইদুর দৌড়াচ্ছে। কাপড় বোনা হয়ে গেলে, তাকে মেজে ঘসে মোলায়েম করে, সুন্দর করে ভাঁজ করে, ছাপ লাগিয়ে, তার পর তাকে বাজারে পাঠানো হয়। মোলায়েম করার কলটি বড়ো মজার। দুটো ফাঁপা রোলার গায়ে গায়ে লাগানো রয়েছে, তার মাঝখান দিয়ে কাপড়টা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফাঁপা রোলারের ভিতর ফুটন্ত জলের বাষ্প চালিয়ে দিয়ে রোলার দুটোকে খুব গরম করা হয়, তার পর আস্তে আস্তে সে দুটিকে ঘোরানো হয়। তখন কাপড়টাও গরমে আর চাপে খুব মোলায়েম হয়ে বেরিয়ে আসে। তার পর সেই কাপড় ভজি করার কলে নিয়ে যায়। সেই কলের দুটো হাত আছে, তা দিয়ে কাপড়টাকে চটপট ভাঁজ করে ফেলে। তার পর প্যাক করার ঘরে সেই কাপড়ে ছাপ মেরে, তাকে বেঁধে, কাগজ মুড়ে বাজারে পাঠাবার জন্য তৈরি করে রাখে।

 এ-সব তো নিতান্ত সাধারণ কাপড়ের কথা হল। যদি রঙিন বা ছিটের কাপড় হয়, তবে তার জন্য ধোলাই করা, সূতায় রঙ দেওয়া, নকশা তোলা, ইত্যাদি আরো নানারকম হাঙ্গামের দরকার হয়।

সন্দেশ—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৩
পার্লামেণ্টের বাড়ি

 বিলাতের যে শাসন-সভা, যেখানে সে দেশের খরচপত্র আইনকানুন ব্যবসাবাণিজ্য প্রভৃতি নানা ব্যাপারের আলোচনা ও ব্যবস্থা করা হয়—তার নাম পার্লামেণ্ট। পার্লামেণ্টের বাড়ির দুই মাথায় দুই চূড়া—তারই একটার গায়ে মাটি হইতে প্রায় একশো পঁচিশ হাত উঁচুতে পার্লামেণ্টের ঘড়ি বসানো। ঘড়িটা এত বড়ো যে রাস্তার লোকে এক মাইল দুর হইতে সেই ঘড়ি দেখিয়া অনায়াসে সময় ঠিক করিতে পারে।

 রাস্তা হইতেই প্রকাণ্ড ঘড়িটা চোখে পড়ে, কিন্তু বাস্তবিক ঘড়িটা যে কত বড়ো তাহা বুঝিতে হইলে একটিবার তাহার ভিতরে ঢোকা দরকার। একটি লোহার প্যাঁচানো সিঁড়ি ঘুরিয়া ঘড়ির কামরায় ঢুকিতে হয়। ঘড়ির চারিদিকে চারিটি মুখ, এক-একটি মুখে এক-একটি ঘর, তাতে দোতালা বাড়ির মতো উঁচু ঘষা কাচের জানলা। জানলার বাহিরে ঘড়ির কাঁটা-এক-একটা সাড়ে সাত হাত লম্বা। রাত্রে সেই ঘরগুলির মধ্যে

১৬৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২