পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভয়ানক অপত্তি হয়। কিন্তু অনেক খবরের কাগজওয়ালা তার প্রস্তাবের সপক্ষে লেখেন আর সাধারণ লোকেও অনেক সভাসমিতি করে তাঁর হয়ে বলেন। রোল্যাণ্ড হিল ছেলেবেলায় গরিব লোক ছিলেন। তিনি গরিবের কষ্ট ভালো করে বুঝতেন আর তাদের জন্যে খাটতেও সর্বদাই প্রস্তুত ছিলেন। তাঁর মনে ছিল, ছেলেবেলায় একদিন তাঁকে একটা চিঠির মাশুল জোগাড় করার জন্য রাস্তায় ঘুরে হেঁড়া কাপড় বিক্রি করতে হয়েছিল। তিনি চিঠি পাঠাবার খরচ সম্বন্ধে অনেক হিসাব করে বললেন, “চিঠি পাঠাবার খরচ অত্যন্ত সামান্য; বেশি খরচ ডাকঘরেরই হয়! আর অনেক চিঠি লোকে নেয় না বলে ডাকঘরের বিস্তর টাকা লোকসান হয়। বড়ো লোকেরা তো বিনা পয়সায়ই অনেক চিঠি পাঠান। এর চেয়ে ভালো বন্দোবস্ত হয় যদি নিয়ম করা যায় যে, চিঠি পাঠাবার আগে মাশুল দিতে হবে। আর মাশুল দেওয়া হয়েছে কিনা বুঝবার জন্য চিঠির উপর একটা টিকিট লাগিয়ে দিলেই হবে। কত মাশুল দেওয়া হল তা টিকিটেই লেখা থাকবে।” আপত্তির পর পার্লামেণ্ট একবার এ উপায়টা পরীক্ষা করতে রাজী হলেন। রোল্যাণ্ড হিলের উপরেই সব বন্দোবস্তের ভার পড়ল। কয়েক বৎসর পরীক্ষা করে দেখা গেল যে, এই ডাকটিকিটের বন্দোবস্ত এত সুবিধাজনক যে এর বিরুদ্ধে আর কোনো আপত্তিই ঠেকে না। তখন থেকে বিলাতে টিকিটের চল আরম্ভ হল আর দেখতে দেখতে সমস্ত পৃথিবীময় টিকিটের ব্যবস্থার আরম্ভ হল। ডাকঘরের বন্দোবস্তও রোল্যাণ্ড হিলের বুদ্ধিতেই অনেকটা হয়েছে।

সন্দেশ—অগ্রহায়ণ, ১৩২৩


অসুরের দেশ

 যে-জাতি শিল্পে বাণিজ্যে বেশ অগ্রসর, যাহারা লেখাপড়ার চর্চা করে, হিসাব করিয়া পাকা দালান ইমারত গাঁথিতে জানে এবং নানারূপ ধাতু ও অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহারে বেশ অভ্যস্ত, মোটের উপর তাহাকে সত্য জাতি বলা যায়। ইতিহাসের প্রাচীন যুগে যে-সকল সভ্য জাতির নাম পাওয়া যায় তাহার মধ্যে একটা জাতির কথা শুনি যাহার নাম অসুর বা আশুর। ইংরাজিতে তাহাকে বলে আসিরিয়া (Assyria)। এই অসুর দেশের নাম প্রাচীন বাইবেল প্রভৃতি পুরাতন পুঁথিতে অনেক স্থানে পাওয়া যায় এবং একশত বৎসর আগে এই দেশের সঙ্গে মানুষের ঐটুকু মাত্র পরিচয় ছিল। মানুষ অসুরের দেশ ও তাহার রাজধানী নিনেভের কাহিনী কেবল পুঁথিতেই পড়িয়া আসিত কিন্তু তাহার চেহারা কেহ চোখে দেখে নাই। কারণ, যেখানে শহর ছিল সে স্থানে খোঁজ করিতে গেলে কেবল মাটির টিপি আর প্রকাণ্ড ময়দান ছাড়া আর কিছুই দেখা যাইত না।

 এই অসুরের সঙ্গে আমাদের পুরাণের অসুরদের কোনো সম্পর্ক আছে কি না তাহা আমি জানি না। এখন মেসোপটেমিয়ার যেখানে ইংরাজের সহিত তুর্কির লড়াই চলিতেছে তাহার প্রায় তিনশত মাইল উত্তরে প্রাচীন অসুরের দেশ ছিল। ইহা কেবল আন্দাজের কথা

১৭৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২