নয়—বাস্তবিকই সেখানে ময়দান খুঁড়িয়া মানুষ সেই পুরাতন লুপ্ত শহরকে বাহির করিয়াছে। প্রায় সাড়ে চারহাজার বৎসরের পুরাতন শহর, সেখানে এই অসুর জাতি দু হাজার বৎসর রাজত্ব করিয়া পরে যুদ্ধবিগ্রহে একেবারে ধ্বংস পায়। সেও প্রায় আড়াই হাজার বৎসর আগেকার কথা—তখনো বুদ্ধের জন্ম হয় নাই।
কথায় বলে ‘সুখে থাকতে ভূতে কিলোয়'। এক-একজন লোক থাকে তাহাদের অন্নবস্ত্রের অভাব নাই, সংসারে বিশেষ কোনো দুঃখ নাই অথচ তাহাদের কী যে খেয়াল, তাহারা ঘরবাড়ি ছাড়িয়া একটা কোনো হাঙ্গামা লইয়া ব্যস্ত থাকে। উত্তরে দক্ষিণে বরফের দেশে, আফ্রিকার মরুভূমিতে, পাহাড়ের চূড়ায় তাহারা অস্থির হইয়া ঘুরিয়া বেড়ায়। এইপ মাথা-পাগলা লোকের দ্বারা জগতের অনেক বড়ো-বড়ো আবিষ্কার হইয়া গিয়াছে। অসুরের রাজ্য আবিষ্কারও এইরূপেই হয়। লেয়ার্ড (Layard) নামে এক ইংরাজ সিংহলে কি একটা ভালো চাকরি পাইয়া এ দেশে আসিতেছিলেন। সোজা পথে জাহাজে চড়িয়া আসিলেই হইত, কিন্তু তাঁহার শখ হইল ডাঙার পথে মেসোপটেমিয়া, পারস্য প্রভৃতি দেখিয়া তিনি এ দেশে আসিবেন।
কিন্তু ঐ-যে খেয়ালের মাথায় তিনি মেসোপটেমিয়া গেলেন, উহাতেই তাহার সব কাজকর্ম উলটাইয়া গেল। মেসোপটেমিয়ার উত্তরে বেড়াইবার সময় তাহার মনে হইল এই তো সেই প্রাচীন সভ্য জাতির দেশ, এখানে খুঁজিলে কি তাহাদের চিহ্ন পাওয়া যায় না? তাঁহার আর চাকরি করা হইল না-তিনি কতকগুলি মজুর লইয়া মাটি খুঁড়িতে লাগিলেন। খুঁড়িতে খুঁড়িতে তাঁহার সঙ্গের টাকাপয়সা সব ফুরাইয়া আসিল, তিনি আবার টাকা সংগ্রহ করিতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে তাঁহার দেখাদেখি আরো দু-চারটি লোক আসিয়া মাটি-খোঁড়া ব্যাপারে যোগ দিল। তখন তুর্কি রাজকর্মচারীদের মনে সন্দেহ জাগিল, এই লোকগুলা খামকা ঘরবাড়ি ছাড়িয়া বিদেশে আসিয়া মাটি কাটিতে চায় কেন? নিশ্চয়ই ইহাদের মনে কোনো দুষ্ট মতলব আছে। সুতরাং তাহারা মার্টি-কাটা বন্ধ করিয়া দিতে চাহিল। তার পর যখন মাটির ভিতর হইতে নানারকম অদ্ভুত মূর্তি আর ঘরবাড়ি বাহির হইতে লাগিল তখন এই আশ্চর্য কাণ্ড দেখিয়া সে-দেশী মজুরগুলা এমন ঘাবড়াইয়া গেল যে, তাহারাও কাজ করিতে চায় না। ইহার উপর সে দেশে নানারকম হিংস্র জন্তুর অত্যাচার ও জ্বরজারির উৎপাত তো ছিলই।
যাহা হউক, অনেক পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে—ইংরাজ ও ফরাসি গভনমেণ্টের সাহায্যে শেষটায় মাটির নীচ হইতে একেবারে অসুরের রাজধানী বাহির হইয়া পড়িল। সে এক আশ্চর্য দৃশ্য। কবে আড়াই হাজার বছর আগে সে শহর ধ্বংস হইয়াছে, লোকজন কোনকালে সে-দেশ ছাড়িয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে অথচ এতদিন পরে তাহাদের সেই পুরাতন কীর্তিগুলি আবার কঙ্কালের মতো মাটির নীচ হইতে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইতেছে।
সেকালের ইতিহাসে জানা যায় যে, নিনেভে শহর শত্রুর হাতে পড়িয়া আগুনে নষ্ট হয়-তাহার প্রমাণ এখনো চারিদিকে দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু আগুনেও সব নষ্ট করিতে পারে নাই। এখনো কত মূর্তি, কত কারুকার্য আর পাথরে আঁকা কত