পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মুক্তার এত আদর সেই মুক্তাও একটা পোকার রস ছাড়া আর কিছুই নয়। সভ্যদেশে সোনা রূপা দিয়া অলংকার গড়ে, কিন্তু অনেক দেশে তামা, লোহা, দস্তা, সীসা পর্যন্ত অলংকার হিসাবে চলিয়া যায়। প্রবাল, নুড়ি, শঙ্খ, কড়ি, হাতির দাঁত, হাঙরের দাঁত, মানুষের হাড়, পাখির পালক, সমুদ্রের শ্যাওলা, কাচের পুঁথি, ছেড়া নেকড়া, ফলের বীচি, ফুল, পাতা, কাঠ—এমন-কি, জোনাকি পোকা বা জীবন্ত পাখি ও কচ্ছপ পর্যন্ত দেশ হিসাবে অলংকার বলিয়া আদর পাইয়া থাকে। কিন্তু যতরকম আশ্চর্য অলংকারের কথা শুনিয়াছি তাহার মধ্যে যেটি আমার কাছে সবচাইতে অদ্ভুত ঠেকিয়াছে সেটি হইতেছে টেলিগ্রাফের তার। প্রথম যখন পূর্ব আফ্রিকার নিগ্রো জাতিরা টেলিগ্রাফের নুতন পুরাতন তারগুলি খুব কিনিত তখন তাহার কারণ বুঝা যায় নাই। পরে দেখা গেল ঐ তারগুলিকে তাহারা মজবুত করিয়া হাতে বা পায়ে প্যাঁচাইয়া সদর্পে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। মেয়েদের মধ্যে যাহারা নিতান্ত শৌখিন তাহারা হাত-পা ও গলা একেবারে তারে ঢাকিয়া ফেলে। কেহ কেহ এমন মজবুত করিয়া তার বাঁধে যে, গায়ের চামড়ায় একেবারে স্ক্রুর মতো দাগ বসিয়া যায়। বর্মাতে কোনো কোনো জায়গায় মেয়েরা গলায় এমন করিয়া তার জড়ায় যে তাহাতে গলা অস্বাভাবিকরকম লম্বা হইয়া পড়ে।

 গলার অলংকারের কথা বলিতে গেলে কঙ্গো প্রদেশের আর-এক জাতির কথা মনে পড়ে। তাহাদের মেয়েরা গলায় গোল জাঁতার মতো পিতলের হাঁসুলি পরে, সেগুলি যত বড়ো আর যত ভারি হয় ততই লোকে বেশি করিয়া বাহবা দেয়! তাহার এক-একটা প্রায় আধ মণ পর্যন্ত ভারি হইতে দেখা গিয়াছে।

 তার পর নাক-কানের কথা আর বেশি কি বলিব! অমিাদের দেশেই এক-এক সময় নথ বা মাকড়ির যেরকম উৎকট চেহারা হয় তাহা দেখিয়া বিদেশী কেহ যদি হাসে, তবে সেটা কি খুব অন্যায় হয়? নাকের গহনার একটা অদ্ভুত ছবি দেখিয়াছি, তাহাতে একটি মেয়ের নাক ফুটা করিয়া কতগুলো মোটা-মোটা কাঠি বসানো হইয়াছে। কাঠিগুলা শিকারী বিড়ালের গোঁফের মতো মুখের দুই দিকে বাহির হইয়া রহিয়াছে।

 নাক-কান ফুটা করিয়া গহনা পরা এ দেশে সকলেই দেখিয়াছ কিন্তু ঠোঁট বা গাল ফুড়িয়া অলংকার বসানো কোথাও দেখিয়াছি কি? দক্ষিণ আমেরিকার বামন জাতির মধ্যে উপরের ঠোটে আংটি গাঁথিবার প্রথা চলিত আছে। গ্রীনল্যাণ্ডের এস্কিমো জাতির মধ্যে এবং উত্তর আমেরিকার কোনো কোনো স্থানে তলার ঠোঁট চিরিয়া তাহার মধ্যে কাঠের চাকতি গুঁজিয়া রাখা হয়। আফ্রিকার কোনো কোনো স্থানে ঠোঁট বা গাল ফুটা করিয়া তাহাতে হাতির দাঁতের ছিপি বসাইবার দস্তুুর আছে। সৌন্দর্যের জন্য লোকে এত কষ্টও সহ্য করে।

 এখন চুলের কথা বলিয়া শেষ করি। নানা ফ্যাশানের চুল ছাঁটা, টেরিকাটা, বাবড়ি রাখা, ঝুটি বাঁধা, এ-সব তো আমরা সর্বদাই দেখি। কিন্তু কোনো মেয়ে যদি মাথায় আঠা লেপিয়া, চুলগুলিকে দড়ির ছড়ের মতো ঝুলাইয়া তাহার উপর লাল রঙ মাখাইয়া আসে, তবে সেটা কেমন দেখাইবে? কিংবা যদি মাথায় চুনকাম করিয়া চুলগুলাকে একেবারে

নানা নিবন্ধ
২০১