পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এবং কেহ কেহ হয়তো মানুষ খাইতেও কোনো আপত্তি বোধ করিত না। ইহার পর আরো বুদ্ধিমান একরকম মানুষ দেখা দিল, যাহারা পাথর-কাটা বিদ্যায় রীতিমতো কারিকর হইয়া উঠিয়াছিল। তাহাদের অস্ত্রগুলি খুব সমান ও ধারালো এবং রীতিমতো শান দিয়া পালিশ করা। তার উপর ইহারা মাটির বাসন গড়িতে, চাষবাস করিতে, কাপড় বুনিতে ও গোরু ছাগল প্রভৃতি জন্তু পুষিতেও শিখিয়াছিল। ইহারা যেখানে যাইত সেইখানেই সেই প্রাচীন যুগের আনাড়ি মানুষকে তাড়াইয়া মারিয়া শেষ করিত। বলিতে গেলে, পাথরের যুগের এই নূতন মানুষটি হইতেই সভ্যতার ইতিহাস আরম্ভ হইয়াছে।

সন্দেশ-আশ্বিন, ১৩২৫


মেঘবৃষ্টি

 বর্ষাকালে রাস্তায় বাহির হইবার আগে আমরা আকাশের পানে তাকাইয়া দেখি। তাহার ভাবগতিক কিরূপ - মেঘ আছে কিনা, বৃষ্টির সম্ভাবনা অথবা ঝড় দেখা যায় কিনা। কিন্তু মেঘ কিরূপে জন্মায়, আকাশে কিভাবে থাকে, মেঘের আকার-প্রকার এবং চালচলন কিরূপ সে কথা ভাবিবার অবসর তখন আমাদের থাকে না।

 মেঘের জন্মের কথা বোধ হয় তোমরা সকলেই জান। পৃথিবীর খাল, বিল, পুকুর নদী, সমুদ্রের জল গরমে বাষ্প হইয়া আকাশে মিশিয়া যায়। সেই বাষ্প জমিয়া খুব ছোটো-ছোটো জলকণার সৃষ্টি হয়। এই-সকল জলকণার স্তুপকেই আমরা বলি মেঘ। মনে হইতে পারে যে জলকণা তো বাতাসের চেয়ে ভারী। তাহা হইলে মেঘ কেমন করিয়া শূন্যে থাকে? বাস্তবিক মেঘ সর্বদাই নীচে নামিতে চেষ্টা করে। কখনো বাতসের ঠেলায় উপরে উঠিতেও পারে, কিন্তু নীচে নামাই তাহার স্বভাব। যে মেঘের জলকণার আকার যত বড়ো সে মেঘ তত তাড়াতাড়ি নীচে নামে। জলকণাগুলি আকারে বেশি বড়ো হইয়া গেলে বৃষ্টি আকারে মাটিতে পড়ে। খুব উঁচুতে যে মেঘ থাকে, তাহাতে অনেক সময়ে জলকণাগুলি জমিয়া বরফের কণা হইয়া থাকে। এই মেঘ আবার নীচে গরম বাতাসের মধ্যে নামিলে সেই বরফ গলিয়া জলকণা হইয়া যায়। ঠাণ্ডা দেশে এই বরফকণাই তুষার বৃষ্টি হইয়া মাটিতে পড়ে।

 অনেক সময় উপরের মেঘ বৃষ্টি হইয়া মাটিতে পৌঁছাইবার আগেই বাষ্প হইয়া মিলিয়া যায়। কাজেই মেঘ আসিলেই যে বৃষ্টি পড়িবে, এ কথা বলা যায় না। শীতের দেশে মাঝে মাঝে একটা বড়ো মজার জিনিস দেখা যায়। মেঘের জলকণা খুব ঠাণ্ডা হইয়া নীচে নামিতে নামিতে হঠাৎ কোনো গাছপালা অথবা অন্য কোনো জিনিসের গায়ে বরফ হইয়া জমিয়া যায়।

 মেঘবৃষ্টি ও ঝড় বাতাসের খবর রাখিবার জন্য সকল সভ্য দেশেই বড়ো-বড়ো সরকারি অফিস আছে। ইংরাজিতে তাহাকে বলে মিটিয়রলজিক্যাল (Meteorological) অফিস। এই-সমস্ত অফিসের কাজ কেবল মেঘ বাতাস ইত্যাদির নানারকম মাপ

২২৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২