পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জোখের হিসাব লওয়া। সে কিরকম হিসাব? কোনখানে কত গরম তাহার হিসাব, কোনখানের বাতাস কতখানি ভিজা বা শুকনা তাহার হিসাব। কোনখানে বাতাসের চাপ কিরূপ, বাতাস কতটা হাল্কা বা কতটা ভারী, তাহার হিসাব; বাতাস কতখানি জোরে কোনদিকে চলিতেছে, কোনখানে কতখানি বৃষ্টি পড়িল, কিরকম মেঘ দেখা দিল, তাহার হিসাব।

 বাতাস যখন চলে তখন তাহাকে বলে ‘হাওয়া', হাওয়া যখন ছোটে তখন তাহার নাম ‘ঝড়'। বাতাস আবার চলাফিরা করে কেন? গরম লাগিলে বা জলের বাম্প মিশিলে বাতাস ছড়াইয়া হালকা হইয়া উপর দিকে ভাসিয়া উঠে। তখন তাহার চাপ কমিয়া খানিকটা জায়গা যেন ফাঁকা হইয়া উঠিতে চায়। কিন্তু ফাঁকা হইবার জো নাই, চারিদিকের চাপে আশপাশ হইতে বাতাস ছুটিয়া সেই হালকা জায়গাটাকে দখল করিতে চায়, তাহাতেই বাতাসের চলাচল হয়। বাতাস যখন যেদিকে চলে, সে এখন মেঘগুলিকে সুদ্ধ সেদিকে টানিয়া লইতে থাকে। এইরকম টানাটানির মধ্যে পড়িয়া এক-একটা মেঘের এক একরকম চেহারা হইয়া ওঠে। যাঁহারা এ-বিষয়ে আলোচনা করিয়া থাকেন তাঁহারা মেঘের চেহারা দেখিয়া তাহার সম্বন্ধে অনেক কথা বলিতে পারেন। খুব উঁচুতে পাঁচ-ছয় মাইল উপরে যে মেঘ থাকে তাহার চেহারা অতি হালকা সূক্ষ চামরের মতো। সে মেঘে বৃষ্টি হয় না, সে মেঘ নীচে নামিতে গেলেই গরম বাতাসে শুকাইয়া মিলাইয়া যায়।

 তার পর দু মাইল চার মাইল উঁচুতে ছিটানো তুলার মতো বা চষাক্ষেতের মতো যে-সব সাদা সাদা মেঘ দেখা যায়, তাহাতেও হঠাৎ বৃষ্টি পড়িবার কোনো আশঙ্কা নাই। এইসমস্ত মেঘ যখন সূর্যাস্তের সময়ে লম্বা লম্বা স্তর বাঁধিয়া আকাশের গায়ে শুইয়া থাকে তখন তাহার উপর সূর্যের আলো পড়িয়া কি আশ্চর্য সুন্দর রঙের খেলা দেখা যায়, তাহা সকলেই দেখিয়াছ। বিদ্যুতের যে মেঘ তাহার চেহারাটা খুব গম্ভীর ও জমকাল হয়, সে যেন রাগে ফুলিয়া পাহাড়ের মতো উঁচু হইয়া উঠিতে থাকে কিন্তু বৃষ্টি নামিতে আরম্ভ করিলেই সে দেখিতে দেখিতে শান্ত হইয়া যায়। তখন সে বৃষ্টি মেঘ হইয়া ধোঁয়ার প্রলেপের মতো আকাশের গায়ে লেপিয়া যায়।

 বিদ্যুৎ যখন চমকায় তখনই মনে হয় 'এইবার বাজ পড়ার শব্দ শুনিব'-এবং অনেক সময়ই সে শব্দ শোনা যায়। বিদ্যুৎ চমকাইলে বাতাসটা কিরকম তোলপাড় হইয়া উঠে ঐ আওয়াজটা হইতেই তাহা বুঝিতে পার। বিদ্যুতের ঝলক ছুঠিবামাত্র চারিদিকে গরম বাতাস ঠিকরাইয়া পড়ে, আবার সেই চোট সামলাইতে গিয়া চারিদিকের বাতাস ছুটিয়া কড়কড় শব্দে টক্কর বাধাইয়া বসে। তাহার পরেও খানিকক্ষণ পর্যন্ত বার বার বহু দূরের মেঘ হইতে গুড়্ গুড়্ করিয়া সেই শব্দের প্রতিধ্বনি আসিতে থাকে।

 মিটিয়রলজিক্যাল অফিস থাকাতে বৃষ্টি-বাদল সম্বন্ধে নানারকম খবর আমরা আগে হইতে জানিতে পারি। 'ঝড় আসিতেছে' এই খবর সময়মতো জানিতে পারিলে মানুষে সাবধান হইয়া তাহার জন্য প্রস্তুত থাকিতে পারে। মনে কর, খবর আসিল-এখনি হইতে দুইশত মাইল দূরে একটা বড়ো ঝড় খুব বৃষ্টি লইয়া ঘটায় পঞ্চাশ মাইল বেগে এইদিকে আসিতেছে। সে যদি বরাবর ঐভাবে এই মুখেই আসে এবং আসিতে আসিতে তাহার বৃষ্টি

নানা নিবন্ধ
২২৫