পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যদি ফুরাইয়া না যায়, অথবা যদি মাঝে কোথাও গরম শুকনা বাতাসে তাহার মেঘ শুকাইয়া না ফেলে, তবে চার ঘণ্টা পরে এখানে বৃষ্টি হইবে।

 মিটিয়রলজিক্যাল অফিসে বড়ো-বড়ো মানচিত্রে সর্বদাই চারিদিকের খবর আঁকিয়া রাখা হয়। বাতাসের চাপ, বাতাসের গতি, বাতাসের বেগ, বাতাসের উত্তাপ, বাতাসের ভিজা ভাব ও মেঘবৃষ্টি, সব খবর সেই মানচিত্রের গায়ে স্পষ্ট রেখা টানিয়া দেখানো হয় এবং বাতাসের ভাবগতিক যেমন ঘণ্টায় ঘণ্টায় বদলাইতে যাকে, মানচিত্রের উপরেও সেই-সমস্ত পরিবর্তনের হিসাব ক্রমাগত বদলাইয়া দেখানো হয়।

সন্দেশ-আশ্বিন, ১৩২৫


বেগের কথা

 যে লোক শৌখিন, সামান্য কষ্টেই কাতর হইয়া পড়ে তাহাকে লক্ষ্য করিয়া বলা হয় ‘ফুলের ঘায়ে মুর্ছা যায়'। রঘুবংশে আছে যে দশরথের মা ইন্দুমতী সত্যসত্যই ফুলের ঘায়ে কেবল মুর্ছা নয়, একেবারে মারাই গিয়াছিলেন। ইন্দ্রের পারিজাতমালা আকাশ হইতে তাঁহার গায়ে পড়ায় তাঁহার মৃত্যু হয়। প্রথম যখন এই বর্ণনাটা শুনিয়াছিলাম তখন ইহাকে অসম্ভব কল্পনা বলিয়া বোধ হইয়াছিল। কিন্তু এখন ভাবিয়া দেখিতেছি ইহা নিতান্ত অসম্ভব কিছু নয়।

 তালগাছের উপর হইতে ভাদ্রমাসের তাল যদি ধুপ করিয়া পিঠে পড়ে তবে তার আঘাতটা খুবই সাংঘাতিক হয়। কিন্তু ঐ তালটাই যদি তালগাছ হইতে না পড়িয়া এ পেয়ারাগাছ হইতে এক হাত নীচে তোমার পিঠের উপর পড়িত, তাহা হইলে এতটা চোট লাগিত না। কেন লাগিত না? কারণ, তাহার বেগ কম হইত। কোনো জিনিস যখন উঁচু হইতে পড়িতে থাকে তখন সে যতই পড়ে ততই তার বেগ বাড়িয়া চলে। যে হাড়ের টুকরাটি হইতে একতলায় মানুষের মাথায় পড়িলে বিশেষ কোনোই অনিষ্ট হয় না-সেইটিই যখন চিলের মুখ হইতে পড়িতে পড়িতে অনেক নীচে প্রবল বেগে আসিয়া নামে তখন তাহার আঘাতে মানুষ রীতিমতো জখম হইতে পারে। ফুলের মালাটিকেও যদি যথেষ্ট উচু হইতে ফেলিয়া দেওয়া যায় তবে তাহার আঘাতটি যে একেবারেই মোলায়েম হইবে না, এ কথা নিশ্চয় করিয়া বলা যায়।

 ঘূর্ণী বায়ুর সময় সামান্য খড়কুটা পর্যন্ত যে ঝড়ের বেগে গাছের ছালে বিধিঁয়া যায়, ইহা অনেক সময়ই দেখা যায়। একটা নরম মোমবাতিকে বন্দুকের মধ্যে পুরিয়া গুলির মতো করিয়া ছুটাইলে সে যে পরু তক্তা ফুটা করিয়া যায়, ইহাও মানুষে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছে। বন্দুকের গুলি জিনিসটা আসলে খুব মারাত্মক নয়; হাতে ছুঁড়িয়া মারিলে তাহাতে চোট লাগিতে পারে, কিন্তু সে চোট খুব সাংঘাতিক হয় না। কিন্তু সেই জিনিস যখন বন্দুকের ভিতর হইতে বারুদের ধাক্কায় প্রচণ্ডবেগে ছুটিয়া বাহির হয় তখন আস্ত মানুষটাকে এপার-ওপার ফুঁড়িয়াও তাহার রোখ থামিতে চায় না।

২২৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২