পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 পৃথিবীর তুলনায় উল্কাগুলি নিতান্তই ছোটো। তাই তাহাদের ধাক্কায় পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হয় না, উল্কাগুলিই মরিয়া শেষ হয়। কিন্তু দুইটা বড়ো-বড়ো পৃথিবী যদি এইরকম ছুটাছুটি করিয়া ধাক্কা লাগায় তবে কাণ্ডটা কিরকম হয়। মানুষের কল্পনা তাহার ধারণাই করিতে পারে না। দুইটার মধ্যে যখন ধাক্কা লাগে তখন তাহাদের প্রচণ্ড বেগ বাধা পাইবামাত্র জ্বলিয়া আগুন হইয়া বাহির হয়। সেই আগুন হইতে পাহাড়প্রমাণ স্ফুলিঙ্গ চারিদিকে হাজারে হাজারে ছুটিয়া যায়। দেখিতে দেখিতে দুই পৃথিবীর শেষ চিহ্ন ঘুচিয়া গিয়া কেবল লক্ষ লক্ষ মাইল জুড়িয়া আগুনের শিখা জ্বলিতে থাকে। এরূপ ঘটনা যে একেবারেই হয় না তাহা নয়; কিছুদিন আগে যে নুতন তারা দেখা গিয়াছিল তাহাও এইরূপ একটা লুপ্তবেগের আগুনমাত্র! কবে ব্রহ্মাণ্ডের কোন কিনারে এই আগুন জ্বলিয়াছিল; তাহারই জ্বলন্ত কিরণ আকাশে তরঙ্গ তুলিয়া ছুটিতে ছুটিতে এতদিনে আমাদের চোখে আসিয়া আঘাত করিয়া গেল। সেই যে অলোকের বেগ, তাহার কাছে আর সমস্ত বেগই হার মানিয়া যায়। কামানের গোলা এত যে প্রচণ্ড বেগে ছুটিয়া যায়, তাহার গতিও আলোকের গতির তুলনায় যেন রেলগাড়ির কাছে শামুকের চলার মতো।

সন্দেশ কার্তিক, ১৩২৫


মজার খেলা

 একবার একটা মজার দৌড়-খেলা দেখিয়াছিলাম। কতগুলা লোককে বড়ো-বড়ো ছালার মধ্যে গলা পর্যন্ত ভরিয়া মাঠের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে-কে আগে যাইতে পারে। কয়েকজন অত্যন্ত সন্তর্পণে অদ্ভুত ভঙ্গিতে পেঙ্গুইন পাখির মতো হেলিয়া চলিতেছে, আর কয়েকজন মাটিতে পড়িয়া একেবারে 'কুমড়ো গড়ান’ গড়াইতেছে। মাঠসুব্ধ লোক একেবারে হাসিয়া অস্থির। ফ্রান্সে একটি 'মোটা মানুষের সমিতি’ আছে; অন্তত সাড়ে তিন মণ ওজন না হইলে তাহাতে ভর্তি হওয়া যায় না। তাহারা একবার মোটা লোকদের জন্য দৌড় খেলার বন্দোবস্ত করিয়াছিল। যাহাদের ওজন পাঁচ-সাত মণের কম হইবে না-এমন অনেক লোকে তাহাতে দৌড়াইয়াছিল। সে দৌড় আমি দেখি নাই কিন্তু তাহার যে ফোটো দেখিয়াছি, সে অতি চমকার-দেখিলে না হাসিয়া থাকা যায় না।

 বহুকাল আগে একটা বিলাতি পত্রিকায় এইরকম কতগুলি অদ্ভুত মজার খেলার কথা পড়িয়াছিলাম। তাহার মধ্যে একটা ছিল খাওয়ার পাল্লা। কতগুলি রেকাবি সম্মুখে লইয়া সকলে টেবিলের কাছে বসিয়াছে; 'এক-দুই-তিন’ বলিতেই তাহাদের পাতে একেবারে উনান হইতে সাংঘাতিক গরম ‘চপ্’ ছাড়িয়া দেওয়া হইল। কাঁটা চামচ নাই, খাবারে হাতও লাগাইতে পারিবে না-এখন যে আগে খাইতে পারিবে তাহারই জিত। যে লোকটা জিতিয়াছিল সে প্রথমেই মাথা দিয়া টুঁ মারিয়া চপ্‌টাকে চ্যাপ্টাইয়া জুড়াইবার সুবিধা করিয়া লইয়াছিল। মাথায় চুল আছে, তাই সহজে গরম লাগে না। আর-একটা খেলাতে কোনো ফল কিম্বা অন্য কোনো খাবার সুতায় বাঁধিয়া ঠিক নাকের সামনেই ঝুলাইয়া রাখা

২২৮
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২