পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়। যে হাত না দিয়া সকলের আগে পরিষ্কার করিয়া খাওয়া শেষ করিবে তাহার জিত। কাজটা শুনিতে বেশ সহজ, কিন্তু কাজে তেমন সহজ নয়। সুতাটা শূন্যে ঝুলিতেছে, মুখ ঠেকাইতে গেলে সেটা আরো দুলিত থাকে।

 একটা গল্প পড়িছিলাম যে এক জায়গায় খেলা হইতেছিল, কে কত উৎকট মুখভঙ্গি করিতে পারে। একজনের উপর ভার ছিল, তিনি বিচার করিয়া বলিবেন, কাহার মুখের ভঙ্গি সকলের চাইতে বিশ্রী ও বিদঘুটে। খেলার জায়গায় এক বেচারা তামাশা দেখিতেছিল, তাহার মুখখানা বাস্তবিকই কদাকার। বিচারক তাহাকে দেখাইয়া বলিলেন, “আমাদের মধ্যে ইনি ‘ফার্স্ট প্রাইজ' পাইবার যোগ্য!” সে লোক আশ্চর্য হইয়া বলিল, “আমি তো এ খেলায় যোগ দিই নাই।” বিচারক গম্ভীরভাবে বলিলেন, “তাই নাকি? তা, আপনি কোনো চেষ্টা না করিয়াই ফাস্ট হইয়াছেন। আপনি থাকিতে ও প্রাইজ আর কেউ পাইতে পারে!” লোকটি প্রাইজ পাইয়া খুশি হইবে কি দুঃখিত হইবে, তাহা বুঝিতে পারিল না।

 ঘরে বসিয়া অনেকজনে মিলিয়া খেলা যায় এমন দু-একটা খেলার কথা বলি। কতগুলা খেলা আছে তাহাতে বেশ চটপটে এবং সতর্ক হওয়া দরকার। তার মধ্যে একটা খেলা এই-একজন লোক বেশ ধীরে ধীরে একটি গল্প বলিয়া বা পাঠ করিয়া যাইবে। সেই গল্পটি এমন হওয়া চাই যে, তাহার মধ্যে অনেকগুলি বেখাপ্পা কথা থাকে। অর্থাৎ এক জায়গায় যেরকম বলা হইয়াছে, আর এক জায়গায় তার উলটারকম কথা থাকিবে। যেমন এক ভদ্রলোকের বর্ণনা দেওয়া গেল তার মাথা ভরা টাক, তার পরে আর-এক জায়গায় হয়তো বলা হইল যে তিনি আয়নার সামনে বাহার করিয়া টেরি ফিরাইতেছেন। এইরকম গল্পের একটি নমুনা দেওয়া গেল-

 “রবিবার, শ্রাবণের কৃষ্ণা চতুর্থী। সন্ধ্যার আকাশ দেখিতে দেখিতে মেঘে ঢাকিয়া আসিল, দেখিতে দেখিতে মুষলধারে বৃষ্টি নামিল। গৃহহীন পিতৃমাতৃহীন যোগেশচন্দ্র অফিসের বেশে বিনা ছাতায় ভিজিতে ভিজিতে নির্জন পথ দিয়া চলিতেছেন—সঙ্গে ট্রামের পয়সাটি পর্যন্ত নাই। স্কুল কলেজ হইতে ছুটি পাইয়া ছাত্রগণ কোলাহল করিয়া ছুটিতেছে— যোগেশচন্দ্রের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নাই, তিনি ভিড় ঠেলিয়া চলিতেছেন, আর ভাবিতেছেন কতক্ষণে পৌঁছিব। একে শীতকাল, তার উপর গায়ে কেবল শতছিন্ন পাতলা ফুটবলের সার্ট, যোগেশচন্দ্র কাঁপিতে কাঁপিতে আপনার গৃহর সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইলেন। এমন সময় কে যেন ডাকিয়া উঠিল, “অন্ধ নাচারকে ভিক্ষা দেও।” যোগেশচন্দ্র দেখিলেন এক হস্তপদহীম ভিখারী কাতরভাবে ভিক্ষা চাইতেছে। দেখিয়াই তাহার মনে দয়ার উদয় হইল। তিনি পকেট হইতে একটি টাকা বাহির করিয়া ভিখারীর হস্তে গুঁজিয়া দিয়া গৃহে প্রবেশ করিলেন এবং ভিজা জুতা ও ছাতা বারান্দায় রাখিয়া গিয়া মুর্ছিত হইয়া পড়িলেন। পতন শব্দে তাঁহার বাপ-মা ‘হায় হায়' করিয়া ছুটিয়া আসিলেন।”

 ইহার মধ্যে কি কি ভুল আছে বাহির কর তো? খেলিবার সময় কতগুলা কাগজ পেনসিল দিয়া সকলকে বসাইয়া দিবে এবং ধীরে ধীরে দুইবার গল্পটি পাঠ করিয়া শুনাইবে। তার পর দু-তিন মিনিট সময় দিবে, তাহার মধ্যে যে সবচাইতে বেশি ভুল ধরিতে পারিবে, সেই বাহাদুর। অনেকটা এই ধরনের আর-একটা খেলা আছে, তাহাতে কথা মনে রাখার উপর

নানা নিবন্ধ
২২৯