পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ভারতবর্ষের নানান ভাষার পুঁথি, যে-ভাষা এখন কেউ পড়তে পারে না সেই-সব অজানা ভাষার পুঁথি, চীনেদের হিজিবিজি অক্ষরের সেই আদ্যিকালের পুঁথি, আফ্রিকা আমেরিকার অদ্ভুত ভাষার পুঁথি, পাথরে খোদাই করা পুঁথি, তামা লোহা ইঁট কাঠের পুঁথি, কাগজ কাপড় রেশম পশম চামড়া বাকলের পুঁথি, হাতের লেখা হাজার হাজার পুঁথি, আর লক্ষ লক্ষ ছাপানো পুঁথি—ঐ এক লাইব্রেরির মধ্যে এই-সমস্ত জিনিস পাওয়া যায়। লাইব্রেরিতে যে বইয়ের ফর্দ রয়েছে সেই ফর্দ লিখবার জন্যই প্রায় দেড়হাজার প্রকাণ্ড বড়ো-বড়ো খাতার দরকার হয়েছে।

 এই লাইব্রেরিতে পড়বার জন্য পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশ থেকে বড়ো-বড়ো পণ্ডিতেরা পড়বার ঘরে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন। তাঁদের দরকার মতো বই, বলবামাত্র চট্‌পট্ এনে দেবার জন্য দু-তিনশো কেরাণী কর্মচারী সমস্তক্ষণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই বৃটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি প্রায় দুশো বছরের পুরানো। অক্সফোর্ডের বড়লিয়ান লাইব্রেরির বয়স প্রায় পাঁচশো বছর। তার আটলক্ষ ছাপানো বই আর একচশ্লিশ হাজার হাতের লেখা পুঁথির মধ্যে এমন অনেক জিনিস আছে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বিশেষত প্রথম যখন মুদ্রাযন্ত্র হয়, সেই সময়কার ছাপানো বইয়ের এমন চমৎকার সংগ্রহ আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। পারিসের জাতীয় লাইব্রেরি (Bibliotheque Nationale) কেবল যে বয়সে সাত-আটশো বৎসর তা নয়, তার আয়তনও লণ্ডনের লাইব্রেরির চাইতে বেশি ছাড়া কম নয়। এই লাইব্রেরিতে প্রায় ত্রিশলক্ষ ছাপানো বই, হাতের লেখা একলক্ষ পুঁথি, আড়াইলক্ষ মানচিত্র আর দশলক্ষ ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। পুবদেশীয় প্রাচীন পুঁথির অর্থাৎ এশিয়ার নানা অঞ্চলের পুঁথির নানারকম দৃষ্টান্ত এখানে যেমন আছে, পৃথিবীর আর কোথাও তেমন নাই।

 কিন্তু লাইব্রেরির চূড়ান্ত কাণ্ড যদি দেখতে হয় তবে আমেরিকায় যাওয়া দরকার। সেখানে ঠিক বৃটিশ মিউজিয়াম বা পারিস্ লাইব্রেরির মতো অত বড়ো লাইব্রেরি না থাকতে পারে কিন্তু যেগুলি আছে সেগুলিও বড়ো সামান্য নয়। আর তাদের বন্দোবস্ত এমন চমৎকার যে পৃথিবীর আর কোথাও তেমন সুন্দর ব্যবস্থা দেখা যায় না। লাইব্রেরি যত বড়োই হোক বইয়ের সংখ্যা দশলাখই হোক কি বিশলাখই হোক যে-কোনো বই চাইবামাত্র ঠিক দু-মিনিটের মধ্যে যদি হাজির না হয় তবেই লাইব্রেরির দুর্নামের কারণ হয়। বই পেতে হলে কেবল তার নাম কিংবা নম্বরটি জানাতে হয়। অমনি লাইব্রেরিতে টেলিফোন করে দেয় আর দেখতে দেখতে তারের গাড়ি চড়ে বই এসে পড়বার ঘরে হাজির হয়। আমেরিকা কুবেরের দেশ, লক্ষপতি ক্রোড়পতি মহাজনের দেশ। লাইব্রেরির জন্য সেদেশে টাকার অভাব হয় না। সাধারণ লোকের ব্যবহারের জন্য আমেরিকার যুক্তরাজ্যে যে-সব বড়ো-বড়ো লাইব্রেরি আছে তেমন লাইব্রেরি পৃথিবীর আর কোথাও নাই। বস্টন পাবলিক লাইব্রেরিতে লোকে টাকা জমা দিয়ে বই পড়তে নেয়। এইরকমে প্রতিদিন কত বই আসছে যাচ্ছে বই-বিলির খাতায় তার হিসাব থাকে। সেই হিসাবে দেখা যায় যে এক বৎসরে পনেরেলক্ষ বার সেখানে বই বিলি করা হয়েছে।

 পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে জঁকাল লাইব্রেরি হচ্ছে আমেরিকান কংগ্রেস লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরির বাড়িটার জন্যই সওয়া দুকোটি টাকা খরচ হয়েছে। লাইব্রেরিতে চল্লিশ

২৩৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২