পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লক্ষ বই রাখার মতো জায়গা রয়েছে। লাইব্রেরির তদ্বিরের জন্য প্রতি বৎসর দশ-বিশ লাখ টাকা মঞ্জুর করা হয়। ঘর বাড়ি আলমারি আসবাবপত্র সব এমনভাবে তৈরি যে আগুনে ভূমিকম্পে ঝড় বিদ্যুতে তার কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। এমন-কি, বইগুলো যাতে পোকায় না কাটতে পারে তার জন্য মোটা মোটা মাইনে দিয়ে লোক রাখা হয়—তাদের কাজ হচ্ছে কেবল পোকা ধ্বংস করবার জন্য নানারকম ব্যবস্থা করা।

 একালের মতো প্রাচীনকালেরও অনেক বড়ো লাইব্রেরির নাম শোনা যায়। অসুরবানি-পালের লাইব্রেরি আর বেবিলনিয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে। তার চাইতেও আধুনিক সময়ে অর্থাৎ প্রায় দুহাজার বছর আগে গ্রীকদের আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির নাম খুব শোনা যেত।

 এই লাইব্রেরির উপর রাজাদের খুব অনুগ্রহ ছিল, তারা নানারকমে তার সাহায্য করতেন। বিদেশী জাহাজে যদি কখনো পুঁথি পাওয়া যেত, তা হলে সেই পুঁথিগুলো রেখে তার নকল দিয়ে জাহাজকে বিদায় করা হত। ভয় দেখিয়ে বা লোভ দেখিয়ে নানা দেশ থেকে নানারকমের পুঁথি নিয়ে আসা হত। এথেন্সে দুর্ভিক্ষের সময়ে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে শস্য জোগানো হয়েছিল এবং তার দাম হিসাবে এথেন্সের ভালো ভালো সরকারি বই আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে ভর্তি করা হয়েছিল। গ্রীকদের এই লাইব্রেরিটির সঙ্গে রোমানদের পার্গেমাম লাইব্রেরির ভারি রেষারেষি ছিল। রোমানরা তাদের লাইব্রেরি বাড়াবার জন্য লোকের উপর অত্যাচার করত, জবরদস্তি করে যার তার পুঁথি কেড়ে নিয়ে যেত, এমন-কি, গ্রীকদের লাইব্রেরি থেকে লোক ভাগিয়ে নেবার জন্য সর্বদাই চেষ্টা করত।

 সে সময়ে কাগজের সৃষ্টি হয় নি, খালি পেপিরসের ছালকে পিটিয়ে লম্বা লম্বা রোল বা থান তৈরি হত। সেইগুলোতে লিখে লাটাইয়ের মতো গুটিয়ে লাইব্রেরিতে বই বলে জমা করা হত। রোমানদের জব্দ করবার জন্য গ্রীকেরা এই পেপিরসের চালান বন্ধ করে দেয়। রোমানরা তখন অনেক চেষ্টা করে চামড়া থেকে একরকম পাতলা কাগজের মতো জিনিস (পার্চমেণ্ট) তৈরি করে, তাই দিয়ে পুঁথি বানাতে শেখে।

সন্দেশ-ফাগুন, ১৩২৫


পৃথিবীর শেষদশা

 সংসারের কোনো জিনিসই চিরকাল একভাবে থাকে না-তা সে ছোটোই হউক আর বড়োই হউক। এই যে প্রকাণ্ড পৃথিবীটা যাহার উপর তোমার আমার মতো কোটি কোটি জীব এমন নিশ্চিন্তে বসিয়া দিন কাটাইতেছি, এই পৃথিবীটাও চিরকাল এমন ছিল না। এক সময়ে—সে কত লক্ষ বৎসর আগেকার কথা তাহা জানি না—এই পৃথিবী এমন গরম হিল যে, জীবজন্তু থাকা তো দূরের কথা, ইহার উপর বৃষ্টি পড়িবারও জো ছিল না। উপরের আকাশে বৃষ্টি জমিয়া নীচে পড়িতে না পড়িতে শূন্যেই বাষ্প হইয়া মিলাইয়া যাইত। যখন আরেকটু ঠাণ্ডা হইল তখন তেমন তেমন বৃষ্টি হইলে তাহা পৃথিবীতে আসিয়া পড়িত কিন্তু

নানা নিবন্ধ
২৩৫