পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ওয়ালা আস্ত জন্তুর চামড়া দিয়া যে 'মশক' বানায় সেই যে যাহার মধ্যে সে জল পুরিয়া রাখে - তাহা দেখিয়াছি তো? ঐরকম প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড মশকে বাতাস ভরিয়া ফুটবলের মতো ফুলাইয়া পঞ্জাব অঞ্চলের লোকে অনেক সময় নদী পার হইয়া থাকে। নৌকাটির চেহারা কিরকম বীভৎস হয়, তাহা দেখিলেই বুঝিতে পারিবে।

সন্দেশ-বৈশাখ, ১৩২৬


ব্যস্ত মানুষ

 অসভ্য মানুষ যে কাজ নিজের হাতে করে, সভ্য মানুষে তারই জন্যে কলকব্জার ব্যবহার করে। গ্রীষ্মকালের এই যে গরম যার জন্য কতকাল ধরে লোকে নানারকম হাতপাখার ব্যবহার করে এসেছে, এই গরমে কলে-চালানো বিদ্যুতের পাখা না হলে আর আজকালকার মানুষের মন ওঠে না। যে মানুষ এক সময় পায়ে হেঁটে দেশ-দেশান্তর ঘুরে বেড়াত, সেই মানুষ এখনকার যুগে গাড়ি ঘোড়া চড়েও সন্তুষ্ট নয়, কত সাইকেল মোটর ট্রাম রেল, কত বাষ্প বিদ্যুতের কারখানা করে তবে তার চলাফেরা করতে হয়। এক সময় দিনে পঞ্চাশ মাইল গেলে সে ভাবত খুব এসেছি। এখন এরোপ্লেনে চড়ে ঘটায় এ মাইল গিয়েও সে বলছে, এখনো যথেষ্ট হয় নি।

 এই-সকল কলকব্জার দৌলতে একদিকে মানুষের সুখ হয় আরাম হয়, সময় আর পরিশ্রম বাঁচে, আর একদিকে হাঙ্গামাও বাড়ে, নূতন নূতন বিপদের কারণ দেখা দেয়। কলকারখানার চিমনির ধোঁয়ায় শহরের বাতাসকে বিষাক্ত করে মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট করে; রাস্তায় মোটরের উৎপাতে নিরীহ পথিক চাপা পড়ে; জলে স্থলে আকাশে নানারকম নূতন দুর্ঘটনায় নূতন নূতন ভয়ের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তবু লাভ-লোকসানের হিসাব করে মানুষ সর্বদাই বলে ‘লাভের চেয়ে লোকসান অনেক কম'। একশো বছর আগে এখান থেকে বিলাত যেতে তিন মাস চার মাস, কখনো বা আরো বেশি সময় লাগত। এখন ষোলো-সতেরো দিনে যাওয়া যায়। এরোপ্লেনের বন্দোবস্ত হলে চার-পাঁচ দিনে যাওয়া যাবে। কিন্তু সে বন্দোবস্ত হতে না হতে এখনই ভাবতে বসেছে, তার চাইতেও ভালো ব্যবস্থা সম্ভব কি না অর্থাৎ আজকে কলকাতায় ভাত খেয়ে বেরুলাম, কাল রাত্রে লণ্ডনে গিয়ে ঘুমোলাম, এইরকম বন্দোবস্ত হয় কি না!

 একখানা বাড়ি বানাতে কত সময় লাগে? এখন আমেরিকায় শুনতে পাই, সাত দিনের মধ্যে নাকি বাড়ি তৈরি হয়ে যায়! যারা তৈরি করে তাদের নমুনা-মতো নক্‌শা পছন্দ করে দিয়ে তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে বেড়াও-আট-দশ দিন বাদে ঘুরে এসে দেখবে, তোমার জন্যে দিব্যি দোতলা দালান তৈরি হয়ে আছে! ঢালাই-করা পাথর জমিয়ে এই-সব বাড়ি তৈরি হয়। ঢালাই করবার জন্যে নানারকম তৈরি-ছাঁচ মজুত রাখতে হয়। বাড়ি করতে হলে আগে ছাঁচগুলো খাটিয়ে এক-একটা ফাঁপারকমের কাঠামো তৈরি হয়। তার পর সেই ছাঁচের ভিতরে পাথুরে মসলা ঢেলে দেয়। দুই দিনের মধ্যে মসলা জমে পাথর হয়ে যায়।

২৪০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২