পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এইরকমে এক-একখানা অস্তি দেয়াল, আস্ত ছাদ বা মেজে তৈরি করে তার পর সেগুলোকে কল দিয়ে তুলে খাটিয়ে বসালেই বাড়ি হয়ে গেল।

 এমনি করে মানুষ একদিকে কাজের সময়টাকে খুব সংক্ষেপ করে আনছে আর একদিকে দূরের জিনিসকে সে আর দূরে থাকতে দিচ্ছে না। পৃথিবীর এ-পিঠে আমরা বসে আছি, আর বারোহাজার মাইল দূরে ও-পিঠের মানুষরা আমেরিকায় বসে কি করছে, প্রতিদিন তার খবর পাচ্ছি। কোথায় যুদ্ধ হল, কোথায় জাহাজ ডুবল, কোথায় মানুষের কি নূতন কীর্তির কথা জানা গেল, অমনি ‘সাত সমুদ্র তেরো নদী' পার হয়ে দেশ-বিদেশে খবর ছুটল-আমরা সকালে উঠে দিব্যি আরামে নিশ্চিন্তে বসে খবরের কাগজে তার সংবাদ পড়লাম। কিন্তু তাতেও কি মানুষের মন ওঠে? মানুষে চেষ্টা করছে, খবরের সঙ্গে সঙ্গে তার ছবিসুদ্ধ টেলিগ্রামে পাঠাতে। চেষ্টা করছে’ই বা বলি কেন-সত্যি করেই টেলিগ্রামে ছবি পাঠাবার যন্ত্র তৈরি হয়েছে। এই যন্ত্রের এক মাথায় ছবি বসিয়ে তার উপর গ্রামোফোনের মতো ছুঁচের কলম বুলিয়ে যায়, আর দুশো-আড়াইশো মাইল দূরে আরেক মাথায় সেই ছবির অবিকল নকল উঠে যায়। কয়েক বৎসর আগে বিলাতের 'ডেইলি মিরর' কাগজের জন্য লণ্ডন থেকে ম্যানচেস্টার (প্রায় দুশো মাইল দূর) এইরকম করে ছবি পাঠানো হয়েছিল। সেই সময়ে এই ছবি পাঠাতে প্রায় পনেরো মিনিট লেগেছিল। আজকাল এর চাইতেও কম সময়ে আরো ভালো ছবি পাঠাবার যন্ত্র তৈরি হয়েছে। হয়তো আরো কয়েক বছর পরে বিলাত থেকে এদেশে ছবি পাঠাবার এইরকম বন্দোবস্ত হতে পারবে। ততদিনে হয়তো বিলাতের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবারও ব্যবস্থা হবে। তোমরা যদি কেউ সে সময়ে বিলাত যাও, তা হলে এ দেশের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলা তো চলবেই, তারা তোমার চেহারা দেখতে চাইলে অমনি ছবি তুলিয়ে টেলিগ্রাম করলেই তোমার সেই দিনকার টাটকা ছবি দেখতে দেখতে এসে পড়বে।

 একজন ফরাসী বৈজ্ঞানিক একরকম দ্রুত ডাকের যন্ত্র বানিয়েছেন, তাতে চিঠি-বোঝাই গাড়িগুলো তার-বাঁধানো বিদ্যুতের পথের উপর উড়ে উড়ে চলে। এই উড়ু্ক্কু গাড়ি নাকি ঘটায় তিনশো মাইল বেগে ছুটতে পারে। পঞ্চাশ মণ ওজনের একটা গাড়িকে অনায়াসেই শূন্যে ঝুলিয়ে পার করা যায়। আজকালকার ডাকের গাড়ি এখান থেকে বর্ধমন যেতে না যেতেই এই গাড়ি একেবারে কাশীতে গিয়ে হাজির হবে।

 পরিশ্রমের কাজ কিংবা কুলিমজুরের হাতের কাজ, যার জন্যে খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করতে হয় না, সেগুলো নাহয় কলে করা গেল। কিন্তু মাথা ঘামিয়ে বুদ্ধি খরচ করে পদে পদে হিসাব করতে হয়, তেমন কাজ কি কলে হতে পারে? হ্যাঁ, তাও পারে—যেমন, অঙ্কের কল বা পাটিগণিত-যন্ত্র। এই যন্ত্রে বড়ো-বড়ো অঙ্কের যোগফল আপনা থেকেই বলে দেয়। বড়ো-বড়ো কারখানার জমাখরচের হিসাব এই কলের সাহায্যে চট‌্‌পট্ বার করে ফেলা হয়। কলের মধ্যে কাগজ বসিয়ে ঠিক ‘টাইপরাইটারে'র মতো চাবি টিপে টিপে অঙ্কগুলো লিখে যাও—তার পর ডানদিকের হাতলখানা চেপে দিলেই আপনা থেকেই তার যোগফল কাগজের উপর ছাপা হয়ে যাবে। মানুষে হিসেব করতে গিয়ে অনেক সময়ে ভুল করে, তাড়াতাড়িতে বড়ো-বড়ো পণ্ডিত লোকেরও গোল বেধে যায়—কিন্তু কলের কাজ একেবারে

নানা নিবন্ধ
২৪১