পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিয়া ইচ্ছামতো মজবুত করা যায়, কোনোটাকে চমৎকার শান দেওয়া বা পারিশ করা যায়।

 এক-একরকম কাজের জন্য এক-একরকম লোহা। আজকাল ভালো ইস্পাত ও উঁচুদরের লোহা করিতে হইলে আগে খাঁটি কাঁচা লোহা তৈয়ারি করা হয়। তার পর তাহার সঙ্গে ঠিক দরকারমতো অন্য কোনো ধাতু বা কয়লা প্রভৃতি মিশাইয়া আবার সমস্তটা গলাইয়া একসঙ্গে জ্বাল দিয়া লইতে হয়। প্রথম কাজটির জন্য বিশেষরকম চুল্লির দরকার হয় -তাহার গঠন এবং ভিতরকার বন্দোবস্ত সাধারণ চুল্লির মতো নয়। একটা প্রকাণ্ড পিপার মতো জিনিস—তাহার মধ্যে পাঁচশো বা হাজার মণ মসলা ধরে; সেই পিপার তলার দিকে আগুন জ্বালাইয়া, তাহার ভিতর দিয়া ঝড়ের মতো দম্‌কা বাতাস চালাইয়া দেওয়া হয়। বাতাসের ঝাপটায় আগুনের শিখা প্রকাণ্ড জিভ মেলিয়া পিপার মুখ হইতে ছুটিয়া বাহির হয়। লোহার মসলা আগুনের তেজে গলিয়া পুড়িয়া যতই বিশুদ্ধ হইয়া আসিতে থাকে, আগুনের রঙও সেই সঙ্গে বদলাইয়া আসিতে থাকে। প্রথমে বেগুনি, তার পর ক্রমে লাল হলদে সাদা হইয়া, শেষে যখন ঘোর নীল রঙ দেখা দেয় তখন আগুনের তেজ নিভাইয়া, প্রকাণ্ড পিপাটিকে কলে ঘুরাইয়া কাত করিয়া তাহার তিতর হইতে তরল কাঁচা লোহা ঢালিয়া ফেলা হয়। তার পর ওজনমতো নানা জিনিসের মিশাল দিয়া সেই লোহাকে নানা কাজের উপযুক্ত করিতে হয়।

 এখানেও কি হাঙ্গামার শেষ আছে? সেই লোহাকে আরো কতবার অগ্নিপরীক্ষায় ফেলিয়া, কত দুরমুশ কলে সাংঘাতিকভাবে দলিয়া পিষিয়া, কতরকমের উৎপাত সহাইয়া তবে তাহাকে ভারি ভারি কঠিন কঠিন কাজে লাগানো চলে।

সন্দেশ-শ্রাবণ, ১৩২৬


কাঁচ

 এক ছিল সওদাগর। সে গেল বাণিজ্য করতে। প্যালেস্টাইনের তীরের কাছে নদীর মুখে তার ছোট্টা জাহাজটি বেঁধে সে তার লোকজন নিয়ে ডাঙায় নামল, আর সেখানেই বালির উপর আগুন জ্বেলে রান্না করতে বসল। হাঁড়ি বসাবার জন্য পাথর পাওয়া গেল না, কাজেই তাদের সঙ্গে যে সোডা-ক্ষারের পাটালি ছিল (যে সোড়া দিয়ে বাসন সাফ করে) তারই কয়েকটার উপর তারা হাঁড়ি চড়াল। রান্না খাওয়া সব যখন শেষ হয়েছে, তখন তাদের সোডা-পাথরের চাক্তিগুগো তুলতে গিয়ে দেখলে তার চিহ্নমাত্র নেই—আছে কেবল স্বচ্ছ পাথরের মতন কি একটা জিনিস যা তারা আর কখনো চোখে দেখে নি। এমনি করে নাকি কাচের আবিষ্কার হয়েছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বালির সঙ্গে ক্ষার গলিয়ে লোকে কাঁচ তৈরি করে আসছে।

 কলার 'বাসনা’ পুড়িয়ে যে ছাই হয়, তার মধ্যে ক্ষার থাকে-তাকে বলে পটাশ ক্ষার। সোডা পটাশ চুন এই-সমস্তই নানারকমের ক্ষার। চুল্লির আঁচে শুধু বালি কখনো গলে না,

নানা নিবন্ধ
২৫১