পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভাবে কলে পাট করে ফিতে দিয়ে কোমরের সঙ্গে বাঁধে। ফিতেগুলো আবার কতরকম কায়দামাফিক ভাঁজ করে গুটিয়ে রাখতে হয়। তার পর দরকারের সময় হাত-পা মেলে লাফ দিলেই হল।

সন্দেশ-মাঘ-ফাল্গুন, ১৩২৬


সেকালের কীর্তি

 পঞ্চাশ বছর আগেকার লোকের যেরকম চালচলন ছিল তার কথা বলতে গেলে আমরা বলি ‘সেকেলে ধরন'। একালের মানুষ আমরা, এইটুকু সময়ের তফাত দেখলেই বলি 'একাল আর সেকাল'।—আর সেকালের মানুষদের ভারি একটা কৃপার চক্ষে দেখবার চেষ্টা করি। আহা! সেকালের মানুষ, তারা কিছুই দেখল না। তারা না চড়ল এরোপ্লেন, না দেখল বায়োস্কোপ, না শুনল গ্রামোফোনের গান, না খেল বিদ্যুৎ-পাখার হাওয়া, টেলিফোনের কথাবার্তা আর বিলাতের টেলিগ্রাফ এ-সব আশ্চর্য ব্যাপার কিছুই তারা জানল না; আরো আগেকার কথা ভাব, একশো দেড়শো বা দুশো বছরের কথা-তখন কোথায়-বা কলের জাহাজ কোথায়-বা রেলের গাড়ি আর কোথায়-বা সাগরজোড়া টেলিগ্রাফের তার? তখনকার মানুষ ফোটোও তোলে না, ডাকটিকিটের ব্যবহারও জানে না, এমন-কি, সাইকেলও চড়ে না। আরো খানিক পেছিয়ে দেখবে, ছাপাখানা বা খবরের কাগজেরও নাম-গন্ধ পর্যন্ত পাবে না।

 দুশো বা পাঁচশো বছরে যদি এতখানি তফাত হয়, তা হলে দশ-বিশ বা পঞ্চাশ হাজার বছর আগে না জানি কেমন ছিল। সেই বুনো গোছের মানুষ, যার ঘর নাই, বাড়ি নাই, গুহার মধ্যে থাকে। যে লিখতে জানে না, পড়তে জানে না, হয়তো খালি অল্পস্বল্প কথা বলতে শিখেছে; কাপড় জামা পর্যন্ত তৈরি করতে পারে না, বড়ো জোর জানোয়ারের চামড়া বা গাছের বাকল জড়িয়ে থাকে। এমন যে মানুষ, তাকে কি আর পূর্বপুরুষ বলে কেউ খাতির করতে চায়? বল দেখি?

 কিন্তু যখন ভেবে দেখি যে, ঐরকম বেচারা মানুষ, গাছ পাথর ছাড়া কোনো অস্ত্র যার সম্বল নাই, সে কি করে সেই সময়কার বড়ো-বড়ো দুর্দান্ত জন্তুগুলোকে ঠেকিয়ে রাখল, তখন তারি আশ্চর্য বোধ হয়, আর মানুষটার সম্বন্ধেও মনে একটু একটু সম্ভ্রম আসে।

 ইউরোপের নানাদেশে পাহাড়ের গহ্বরের মধ্যে প্রাচীন গুহাবাসীদের নানারকম চিহ্ন পাওয়া যায়; তা থেকে সেই-সব মানুষের সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য খবর পাওয়া যায়। একএকটা গুহার মধ্যে মানুষের হাড়ের সঙ্গে আরো অনেকরকম জন্তুর হাড় পাওয়া যায়। তা দেখে বোঝা যায় যে, ঐ-সব গুহার মধ্যে মানুষ ছাড়া অন্য অন্য জন্তুরাও থাকত, মানুষ এসে তাদের তাড়িয়ে গুহা দখল করেছে। আবার অনেক সময়ে হয়তো এমনও হয়েছে যে, তাদেরই অত্যাচারে মানুষকে গুহা ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

 সেকালের গুহা-ভল্লুক, খড়্গদন্ত বাঘ, লোমশ গণ্ডার, মহাশৃঙ্গী হরিণ, অতিকায় হস্তী এরাই ছিল মানুষের প্রধান সঙ্গী, শিকার ও শত্রু। পণ্ডিতেরা গুহার ভিত্ খুঁড়ে স্তরের পর

২৫৮
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২