পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্তর মাটি পরীক্ষা করে দেখেছেন। এক-এক স্তরের এক-এক রকম ইতিহাস। খুঁড়তে খুঁড়তে কোথাও হয়তো দেখবে, এক জাগায় খালি গণ্ডারের হাড়, তার নীচের স্তরেই মানুষের তৈরি অস্ত্রশস্ত্রের চিহ্ন—অর্থাৎ সেখানে আগে মানুষ ছিল, তার পর তারা গণ্ডারের অত্যচারে পালিয়েছে। পোল্যাণ্ডের এক গুহার মধ্যে প্রায় হাজারখানেক অতি প্রকাণ্ড ভালুকের হাড় পাওয়া গিয়েছে-তার মধ্যে অনেক জন্তুই আজকাল পাওয়া যায় না।

 মানুষের চিহ্নের মধ্যে কংকাল আর অস্ত্রশস্ত্রই বেশি। খুব শক্ত চক্‌মকি পাথরকে নানারকমে ঠুকে আর শান দিয়ে সে-সমস্ত অস্ত্র তৈরি হত। খুঁটিনাটি ঘরোয়া কাজের জন্য হাড়ের অস্ত্রও ব্যবহার করা হত। আর তা ছাড়া ভালোরকম একটা গাছের ডাল, কিম্বা অতিকায় হস্তীর পায়ের হাড় পেলেও তো বেশ একটি উঁচুদরের মুগুর তৈরি হতে পারে। ঐ সময়কার মানুষে তীর-ধনুকের ব্যবহার জানত কিনা সন্দেহ; কারণ আজ পর্যন্ত ধনুকের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় নি। কাঠের জিনিস কিনা, বেশি দিন টেকে না। দু-একটা অস্ত্র দেখে মনে হয় যেন তীরের ফলক, কিন্তু সেগুলো বর্শার মুখও হতে পারে। আজকালকার বড়ো-বড়ো শিকারীদের যদি এইরকমের অস্ত্র নিয়ে সুন্দরবনে বাঘ শিকার করতে বলা হয় তবে তারা যে খুব উৎসাহ প্রকাশ করবে, এমন তো বোধ হয় না; অথচ কেবল এই-সবের জোরেই গুহাবাসীরা সকলরকম সাংঘাতিক জন্তুকে শিকার করত।

 সে যে মানুষ, অর্থাৎ বুদ্ধিমান জীব, ঐ অস্ত্রগুলোই তার প্রমাণ। তা ছাড়া সে যে আগুনের ব্যবহার জানত, তার প্রমাণ, গুহার মধ্যে কাঠ-কয়লা আর ছাইয়ের চিহ্ন। তাই নয়, তার আসবাবের সঙ্গে মোটা-মোটা হাড়ের ছুঁচ পাওয়া গিয়েছে, সুতরাং গুহাবাসীদের মেয়েরা তাদের চামড়ার কাপড় সেলাই করতে জানত। কি দিয়ে সেলাই করত? বোধ হয় চামড়ার কিম্বা তাঁতের ফিতে, নাহয় গাছের তন্তু দিয়ে। কে জানে, হয়তো তাদের মধ্যেও নানারকম বাহার দেওয়া পোশাকের ফ্যাশান ছিল। কিন্তু তাদের সবচাইতে বড়ো কীর্তি হচ্ছে এই যে, তারা ছবি আঁকতে পারত। সেগুলো হচ্ছে পৃথিবীর আদিম ছবি, গুহার দেওয়ালের উপর লাল মাটি আর ভূষা কালি দিয়ে আঁকা। মাঝে মাঝে দু-একটা মাটির মূর্তি আর হাড়ে পাথরে বা হাতির দাঁতের উপর নানারকম চেহারার নক্‌শা। প্রায় সমস্তই জানোয়ারের ছবি; হরিণ, ঘোড়া, বাইসন, হাতি এই-সব।

সন্দেশ-চৈত্র, ১৩২৬


চীনের পাঁচিল

 চীনদেশের রাজা ছিলেন চীন্-শিঃ-হোয়াংতি। 'চীন্’ মানে আদি রাজা—যার আগে আর কেউ রাজা ছিল না। আসলে কিন্তু তার আগে অনেক রাজা ঐ চীনদেশেই রাজত্ব করে গিয়েছেন। কারণ হোয়াংতি যে সময়ে রাজা ছিলেন, সে হল মোটে দুহাজার বছর অগেকার কথা। তার আগে যাঁরা রাজা ছিলেন তাঁদের নামধাম, রাজত্বের তারিখ, বংশ পরিচয়, আর বড়ো-বড়ো কীর্তির কথা সমস্তই ইতিহাসের পুঁথিতে লেখা ছিল। কিন্তু হোয়াংতি

নানা নিবন্ধ
২৫৯