গিন্নীটা, বাপ রে যেন সিংহীটা! বাসন নাড়ে ঝনার্ঝন, কাপড় কাচে দমাদ্দম্—এটাও মিলছে না? তা হলে নিশ্চয় এটা—
খুস্খুসে কাশি ঘুষ্ঘুষে জ্বর, ফুস্ফুসে ছ্যাঁদা বুড়ো তুই মর।
মাজ্রাতে ব্যথা পাঁজ্রাতে বাত, আজ রাতে বুড়ো হবি কুপোকাত।”
সজারুটা ভয়ানক কাঁদতে লাগল, “হায়, হায়! আমার পয়সাগুলো সব জলে গেল। কোথাকার এক আহাম্মক উকিল, দলিল দিলে খুঁজে পায় না!”
নেড়াটা এতক্ষণ আড়ষ্ট হয়ে ছিল, সে হঠাৎ বলে উঠল, “কোনটা শুনতে চাও? সেই যে—বাদুড় বলে ওরে ও ভাই সজারু—সেইটে?”
সজারু ব্যস্ত হয়ে বলল, “হ্যাঁ-হ্যাঁ, সেইটে, সেইটে।”
অমনি শেয়াল আবার তেড়ে উঠল, “বাদুড় কি বলে? হুজুর, তা হলে বাদুড়গোপালকে সাক্ষী মানতে আজ্ঞা হোক।”
কোলাব্যাঙ গাল-গলা ফুলিয়ে হেঁকে বলল, “বাদুড়গোপাল হাজির?”
সবাই এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল, কোথাও বাদুড় নেই। তখন শেয়াল বলল, “তা হলে হজুর, ওদের সক্কলের ফাঁসির হুকুম হোক।”
কুমির বলল, “তা কেন? এখন আমরা আপিল করব?”
প্যাঁচা চোখ বুজে বলল, “আপিল চলুক! সাক্ষী আন।”
কুমির এদিক-ওদিক তাকিয়ে হিজি বিজ্ বিজ্কে জিজ্ঞাসা করল, “সাক্ষী দিবি? চার আনা পয়সা পাবি।” পয়সার নামে হিজি বিজ্ বিজ্ তড়াক্ করে সাক্ষী দিতে উঠেই ফ্যাক্ফ্যাক্ করে হেসে ফেলল।
শেয়াল বলল, “হাসছ কেন?”
হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, “একজনকে শিখিয়ে দিয়েছিল, তুই সাক্ষী দিবি যে, বইটার সবুজ রঙের মলাট, কানের কাছে নীল চামড়া আর মাথার উপর লালকালির ছাপ। উকিল যেই তাকে জিজ্ঞাসা করেছে, তুমি আসামীকে চেন? অমনি সে বলে উঠেছে, আজ্ঞে হ্যাঁ, সবুজ রঙের মলাট, কানের কাছে নীল চামড়া, মাথার উপর লাল কালির ছাপ—হোঃ হোঃ হোঃ হো—”
শেয়াল জিজ্ঞাসা করল, “তুমি সজারুকে চেন?”
হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, “হ্যা, সজারু চিনি, কুমির চিনি, সব চিনি। সুজারু গর্তে থাকে, তার গায়ে লম্বা-লম্বা কাঁটা, আর কুমিরের গায়ে চাকা-চাকা ঢিপির মতো, তারা ছাগল-টাগল ধরে খায়।” বলতেই ব্যাকরণ শিং ব্যা-ব্যা করে ভয়ানক কেঁদে উঠল।
আমি বললাম, “আবার কি হল?”
ছাগল বলল, “আমার সেজোমামার আধখানা কুমিরে খেয়েছিল, তাই বাকি আধখানা মরে গেল।”