পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেওয়া যায় তাহা হইলে বেশ একটু ভারি জিনিসকেও অনেক দূর পর্যন্ত ঠেলিয়া নিয়া যায়। বিলাতের কোনো কোনো বড়ো দোকানে এই উপায়ে ছোটোখাটো জিনিস দোকানের নানাস্থানে পাঠানো হয়। খুচরা টাকাপয়সা দোকান বিভাগ হইতে অফিস বিভাগে পাঠাইতে হইলে একটি সরু চোঙার মধ্যে ভরিয়া, সেই চোঙাটিকে একটা লম্বা নলের মুখে পুরিয়া দেয়। তার পর একটা হাতল চাপিয়া দিলেই নলের মধ্যে দম্কা বাতাস ঢুকিয়া চোঙাটাকে একেবারে অফিস পর্যন্ত ঠেলিয়া দেয়। অফিস হইতে দোকানের প্রত্যেক বিভাগের সঙ্গে এইরকম নলের যোগ থাকে। কোনো গোলমাল হাঙ্গামা নাই, লোকজনের ছুটাছুটি নাই, মুহর্তের মধ্যে কাজ শেষ।

 প্রায় কুড়ি বৎসর আগে একজন ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার বলিয়াছিলেন যে, এইরকমে নলের সাহায্যে বড়ো-বড়ো শহরের নানা স্থানে ডাক চালাচালি করিতে পারিলে খুব সুবিধা হয় এবং তাহাতে টেলিগ্রাফের মতো তাড়াতাড়ি কাজ হওয়া সম্ভব! আজকাল ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক বড়ো-বড়ো শহরে এইরূপ হাওয়ার ডাকের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। শহরের মধ্যখানে একটা বড়ো অফিস, তাহার চারিদিকে শহরের নানাস্থান পর্যন্ত নলের শাখা, কোনো কোনো নল তিন-চার মাইল পর্যন্ত লম্বা হয়। মনে কর, আমরা প্যারিস শহরে আছি, তোমার যদি আমার কাছে কোনো জরুরি চিঠি পাঠাইবার দরকার হয় তাহা হইলে প্রথমে তোমাকে ডাকঘরে গিয়া একরকম পাতলা পোস্টকার্ড কিনিতে হইবে। এই কার্ডের দাম অবশ্য সাধারণ পেস্টিকার্ডের চাইতে কিছু বেশি। কিন্তু টেলিগ্রাফ করিতে যে মাশুল লাগে, সে হিসাবে নিতান্তই সামান্য। সেই কার্ডে চিঠি লিখিয়া নলঘরের বাক্সের মধ্যে চিঠি পোস্ট করিতে হয়। অধিকাংশ স্থানে মেয়েরাই সেখানকার কাজ করে। তাহাদের একজন আসিয়া তোমার চিঠিখানা লইয়া সেটিকে একটি চোঙার মধ্যে পুরিয়া দিবে। চোঙাটি রবার ও বনাত দিয়া মোড়া এবং এমনভাবে তৈরি যে সেটাকে হাওয়ার নলের ভিতর ঢুকাইয়া দিলে চোঙার মুখ ও নলের মাঝে একটুকুও ফাঁক থাকে না—ফাক থাকিলে হাওয়া বাহির হইয়া যায় এবং তাহাতে হাওয়ার জোর কমিয়া যায়। চোঙাটিকে নলের মধ্যে ভরিয়া নলের মুখ বন্ধ করিয়া একটা হাতল ঘুরাইয়া দিলেই পাস্পকলের হাওয়ায় তাহাকে বড়ো আফিসে পৌঁছাইয়া দিবে। সেখানকার লোকেরা আবার সেটাকে অন্য একটা নলের মধ্যে পুরিয়া, আমার বাড়ি যে পোস্টাফিসের এলাকায় সেই পোস্টাফিসে চালান করিয়া দিবে। তার পর যেমন করিয়া টেলিগ্রাফ বিলি হয় তেমনি করিয়া সেই চিঠি আমার বাড়িতে বিলি করা হইবে। তোমার নিজের হাতের চিঠি টেলিগ্রাফের মতন তাড়াতাড়ি এবং তাহার চাইতে অনেক সস্তায় আমার বাড়িতে আসিয়া হাজির হইবে।

 কলকব্জা থাকিলেই তাহা বিগড়াইবার সম্ভাবনা থাকে; নলের মধ্যে দৈবাৎ যদি কোথাও চোঙা আটকাইয়া যায় তাহা হইলে কি হইবে? সেইরূপ অবস্থায় মাটি খুঁড়িয়া না পরীক্ষা করিতে হয় এবং দরকার হইলে নল মেরামত করিয়া দোষ সারাইতে হয়। কিন্তু দুই মাইল বা চার মাইল লম্বা নল, তাহার কোন জায়গাটিতে মাটি খুঁড়িতে হইবে তাহা বুঝিবে কিরূপে? তাহা বাহির করিবার একটা চমৎকার উপায় আছে। এ-সকল ডাকঘরে এমন বন্দোবস্ত থাকে যে, চোঙা চলিতে চলিতে কোথাও আটকাইয়া গেলে তাহা তৎক্ষণাৎ টের

নানা নিবন্ধ
২৭৫