পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই হেলানো মিনারের উপর থেকে গ্যালিলিও ‘ভারি জিনিসের পতন' সম্বন্ধে কতগুলি পরীক্ষা করেন। এখনও বিজ্ঞানের বইয়ে সেই-সমস্ত পরীক্ষার কথা আলোচনা করা হয়। সে সময়ে লোকের বিশ্বাস ছিল যে, যে জিনিস যত ভারী, শূন্যে ছেড়ে দিলে সে জিনিস তত তাড়াতাড়ি মাটিতে পড়ে। দুহাজার বৎসর আগে মহাপণ্ডিত আরিস্টটল এ কথা বলে গিয়ে ছিলেন সুতরাং সকলেই তা বিশ্বাস করত। তিনি বলেছিলেন যে একটা লোহার গোলা যদি আর একটার চাইতে দশ গুণ ভারী হয়, তা হলে দুটোকে একসঙ্গে ছেড়ে দিলে একটা আর একটার চাইতে দশ গুণ তাড়াতাড়ি মাটিতে পড়বে। গ্যালিলিও বললেন, “তা কখনোই হতে পারে না। দুটোই একসঙ্গে সমান বেগে পড়বে।” গ্যালিলিওর কথা শুনে পণ্ডিতেরা ক্ষেপে গেলেন। তারা বললেন, “লোকটার আস্পর্ধা দেখ। অ্যারিস্টট্‌লের মতো অত বড়ো পণ্ডিতের উপর আবার টিপ্পনী করতে চায়!” গ্যালিলিও বললেন, “অত রাগারাগিতে দরকার কি? এসো, আমি পরীক্ষা করে দেখাচ্ছি। আমার কথা হাতে-কলমে প্রমাণ করতে না পারলে তখন তোমরা যা ইচ্ছা তাই বোলো।”

 তার পর একদিন গ্যালিলিও পরীক্ষা দেখবার জন্য পিসা বিদ্যালয়ের যত অধ্যাপক আর যত ছাত্র সকলের সাক্ষাতে এই আহ্লাদী মিনারের সাততলার উপর উঠলেন। সেখানে উঠে তিনি দু হাতে দুটো লোহার গোলা নিলেন—একটার ওজন আধ সের আর একটার পাঁচ সের। গোল দুটিকে তিনি ঠিক একসঙ্গে ছেড়ে দিলেন আর সকলের সামনে ঠিক একসঙ্গে তারা মার্টিতে পড়ল! গ্যালিলিও আবার বললেন, “তোমরা যে কেউ এসে পরীক্ষা করে দেখতে পার—দুটো গোলা দুরকম ওজনের হলেও ঠিক একসঙ্গে মাটিতে পড়বে।” কিন্তু মানুষের কতরকমই দুর্বুদ্ধি হয়। পণ্ডিতেরা বললেন, “এ হতভাগার কথা আমরা কেউ শুনব না! মহাপণ্ডিত অ্যারিস্টট্ল যা বলেছেন তার উপর আর কথা নেই।” পিসা শহরময় ঘোর আন্দোলন আরম্ভ হল। গ্যালিলিওর বক্তৃতায় আর তেমন ছাত্রই হয় না; যারা যায় তারাও খালি গোলমাল বাধায়, দুয়ো দুয়ো করে, আর ঠাট্টা করে হাততালি দেয়!

 লোকের উৎপাতে শেষটায় গ্যালিলিওকে তার জন্মস্থান ছাড়তে হল! একটা সত্য কথা বলবার জন্য মানুষের কি শাস্তি! যা হোক, পরে তার জন্য গ্যালিলিওর সম্মান তো বাড়লই সঙ্গে সঙ্গে পিসার প্রসিদ্ধ মিনারটিও আরো প্রসিদ্ধ হয়ে উঠল।

সন্দেশ-বৈশাখ, ১৩২৮


আদ্যিকালের গাড়ি

 আমার বেশ মনে আছে, ছেলেবেলায় রাস্তায় কেউ সাইকেল চড়ে গেলে, আমরা ছুটোছুটি করে দেখতে যেতাম, আর মনে করতাম ভারি একটা অদ্ভুত জিনিস দেখছি। এখন কলকাতার রাস্তা দিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল, নানারকম মোটর গাড়ি, ইলেকট্রিক ট্রামএই-সব কত যে যাচ্ছে তার ঠিকানাই নাই। এই-সব দেখে দেখে এখন পুরানো হয়ে

নানা নিবন্ধ
২৭৯