পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এক ঘণ্টা নাচের বাজনা হবে,” “নটার সময় ছোটো ছেলেদের জন্য গল্প শোনানো হবে।” আমেরিকায় এরই মধ্যে নানা শহরে সবসুদ্ধ কয়েক হাজার স্টেশন বসান হয়েছে। সেইসব টেশনের শ্রোতাদের সংখ্যা যে কত, তা এ থেকেই বুঝতে পারবে যে এক নিউইয়র্ক শহরেই তিনলক্ষের বেশি শ্রোতা প্রতিদিন বিনা তারে টেলিফোন শোনে।

 অনেকগুলো ষ্টেশন মিলে যখন একসঙ্গে আকাশে ঢেউ ছড়াতে থাকে তখন অনেক লোকের একসঙ্গে কথা বলার মতো একটা ভয়ানক গোলমালের সৃষ্টি হতে পারে। সেইজন্য স্টেশনওয়ালারা নিজেদের মধ্যে এরকম বন্দোবস্ত করে নিয়েছে যে এক-এক ষ্টেশন থেকে খালি এক-এক রকমের ঢেউ ছাড়া হবে। আকাশে যে বিদ্যুতের তরঙ্গ ওঠে তাকে স্টেশনওয়ালাদের ইচ্ছামতো ছোটো বা বড়ো করা যায়। যেমন একটা স্টেশন থেকে যদি একশো হাত লম্বা ঢেউ ছাড়া হয় তা হলে তার পাশের টেশন থেকে নব্বই হাত কি একশো দশ হাত লম্বা ঢেউ ছাড়তে পারে, কিন্তু একশো হাত ঢেউ ছাড়বার হুকুম তাদের নেই। শ্রোতারা যে টেলিফোনের কল ব্যবহার করে তাতে এমন বন্দোবস্ত থাকে যে সে কল খালি একরকম বিদ্যুতের ঢেউয়েতেই সাড়া দিবে। তার চেয়ে ছোটো বা বড়ো ঢেউ এলে কলে কোনোরকম স্পষ্ট আওয়াজ শোনা যাবে না। বেহালার কানে মোচড় দিয়ে যেমন তারের সুর অনেকটা নামানো বা চড়ানো যায় তেমনি টেলিফোনের শব্দ ধরবার যন্ত্রটিকেও নানারকম ঢেউয়ের তালে চড়িয়ে বা নামিয়ে বাঁধা যায়। মনে কর তোমার টেলিফোনের কল এখন যেভাবে বাঁধা আছে তাতে একশো হাত ঢেউওয়ালা ষ্টেশনের শব্দ শোনা যেতে পারে। কিন্তু তুমি বিজ্ঞাপনে দেখলে, আজ সন্ধ্যার সময় নব্বই হাত ঢেউয়ের স্টেশনেতে খুব বড়ো কোনোও ওস্তাদ গান করবে। তুমি ইচ্ছা করলে তোমার কলের বাঁধন বদলিয়ে তাতে নব্বই হাত তরঙ্গ ধরে সেই টেশনের গান শুনতে পার। যারা এই-সব টেলিফোনের কল ব্যবহার করে কেবল তাদের জন্য এর মধ্যেই নানারকম খবরের কাগজ আর মাসিকপত্র বের হতে আরম্ভ করেছে। তাতে কোথায় কোন নুতন ষ্টেশন হচ্ছে, কখন কোথায় কি হবে, টেলিফোন কলের কি কি নতুন উন্নতি হচ্ছে, এই-সমস্ত খবর থাকে। তা ছাড়া কলওয়ালাদের নানারকম বিজ্ঞাপন থাকে; আর টেলিফোনের কল সম্বন্ধে আর তার ব্যবহার সম্বন্ধে নানারকম উপদেশ থাকে।

 সাধারণত যে-সব টেলিফোনের কল ব্যবহার হয়, তাতে কানের উপর চাক্‌তির মতো বা চোঙার মতো টেলিফোনের মুখ বসিয়ে আওয়াজ শুনতে হয়। যতজন শ্রোতা ততগুলো চোঙা বা চাক্‌তি দরকার। কিন্তু আর একটু বেশি টাকা খরচ করলে আর একরকমের টেলিফোনের কল পাওয়া যায় যাতে গ্রামোফোনের চোঙার মতো একটা মস্ত চোঙার ভিতর দিয়ে পরিষ্কার আওয়াজ বেরোতে থাকে। পাঁচ-সাতজন বা বিশ-পঞ্চাশজন লোকে একসঙ্গে বসে সেই আওয়াজ শুনতে পার।

 বিনা তারের টেলিফোন হওয়াতে মানুষের যে কতদিকে কতরকম সুবিধা হচ্ছে তা আর বলে শেষ করা যায় না। ছোট্টোখাট্টো টেলিফোনের কলটি তোমার পকেটে করে সঙ্গে নিয়ে যাও, পথের মধ্যে যেখানে ইচ্ছা একটা বাতি বা থাম কিম্বা টেলিগ্রাফ-পোষ্টের গায়ে কলের তার ঠেকিয়ে নিলেই কতরকম আওয়াজ শুনতে পারবে। যদি নিজের বাড়িতে কিম্বা অফিসে একটি ছোটোখাটো ঢেউ পাঠাবার স্টেশন বসাও তা হলে বাড়ির লোকে বা অফিসের লোকে

নানা নিবন্ধ
২৮৭