পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যখন ইচ্ছা তোমায় খবর পাঠাতে পারবে। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পার যে, যেখানেই তুমি থাক-না কেন, হঠাৎ বিশেষ কোনোও দরকার পড়লে কিম্বা কোনো বিপদ-আপদ ঘটলে তখনি তোমার কাছে তার খবর পৌছাতে পারবে।

 এমনি করে 'যে গান কানে যায় না শোনা', যে গান আকাশের তরঙ্গে চড়ে বিদ্যুতের মতো বেগে চারিদিকে ছুটে বেড়ায়, সেই অশব্দ গানকে আকাশময় ছড়িয়ে দিয়ে মানুষ আবার তাকে কলের মধ্যে ধরে আকাশের ভাষা ও আকাশের সুর শুনছে। আমাদের দেশে গল্প ও পুরাণে যে আকাশবাণীর কথা শুনতে পাই-এও যেন সেই আকাশবাণীর মতো কোথাও কোনো আওয়াজ নাই, জনমানুষের সাড়া নাই, অথচ কলের মধ্যে কান দিলেই শুনি আকাশময় কত কণ্ঠের কত ভাষা, কত বিচিত্র গান আর কত যন্ত্রের সুর।

সন্দেশ-ভাদ্র, ১৩২৯


যদি অন্যরকম হত

 এই পৃথিবীটাকে জন্মে অবধি আমরা যেমন দেখে আসছি সে যে বরাবর ঠিক সেরকম ছিল না তা তোমরা সবাই জান। এখন সে যেমনটি আছে চিরকাল তেমনটিও থাকবে না। আমরা এখন তার যেরকম চেহারা দেখছি সেরকম না হয়ে যদি সে অন্যরকম হত, যদি তার শনির মতো আংটি থাকত কিম্বা বৃহস্পতির মতো দশ-বারোটা চাঁদ থাকত তা হলে আরো কত অদ্ভুত কাণ্ড দেখতে পেতাম। চাঁদ যেমন বারো মাসে তার একই পিঠ পৃথিবীর দিকে ফিরিয়ে থাকে, ও পিঠে কি আছে তা আমাদের দেখতে দেয় না বুধগ্রহ ঠিক তেমনি করে সারা বছর সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। পৃথিবী যদি তেমনি করে কেবল একটা দিকই সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে রাখত—তা হলে ব্যাপারটা কি হত একবার ভাব দেখি। একদিকে চিরকালই রোদ, চিরকালই গরম, একটু জুড়াবার অবসর নাই, সব মরুভূমি, সব ফেটে চৌচির। আর-একদিকে কেবলই রাত, কেবলই ঠাণ্ডা আর কেবলই বরফ। জীবজন্তুর সাধ্য কি যে তেমন ঠাণ্ডায় বা তেমন গরমে পাঁচ মিনিটও বেঁচে থাকে। এই দুইয়ের মাঝখানে যেখানে বারো মাস কেবলই সন্ধ্যা, যেখানে সূর্য অস্ত যায় না, উদয়ও হতে চায় না, কেবল আকাশের সীমান্তের কাছে উঁকিঝুঁকি মারে সেখানে হয়তো কষ্টেসৃষ্টে জীবজন্তুরা টিকে থাকতে পারে, গাছপালা যদি থাকে তবে তাও ঐ সন্ধের দেশটুকুতেই থাকবে।

 এক জায়গায় মাটি যদি গরম হয় আর তার কাছেই আশেপাশে যদি তার চাইতেও ঠাণ্ডা জায়গা কোথাও থাকে তা হলে গরম জায়গার হাওয়া হালকা হয়ে উপরদিকে উঠতে থাকে, আর চারিদিকের ঠাণ্ডা বাতাস এসে সেই জায়গা দখল করতে থাকে। এমনি করে ছোটো-বড়ো ঝড়ের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর একটা দিক যদি আগুনের মতো গরম আর একদিক বরফের চাইতেও ঠাণ্ডা হত তা হলে সারা বছর ধরে যে ভীষণঝড়ের সৃষ্টি হত, তার কাছে এই পৃথিবীর বড়-বড়ো তুফানগুলো নিতান্তই ছেলেখেলা। সুতরাং পৃথিবীর যে এখনো চাঁদের মতো বা বুধগ্রহের মতো দশা হয় নি সেটা আমাদের পক্ষে খুবই সৌভাগ্যের কথা বলতে

২৮৮
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২