পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অতিবড়ো সভ্য জাতিরাও আজ পর্যন্ত শিখে উঠতে পারে নি। সে বিদ্যাটি হচ্ছে বুমেরাং অস্ত্রের ব্যবহার। অস্ত্র বললাম বটে, কিন্তু তা বলে খুব একটা জটিল বা মারাত্মক কিছু মনে করে বসো না। বুমেরাং জিনিসটি হচ্ছে এক টুকরা বাঁকানো কাঠ মাত্র। সেই কাঠের এক পিঠ সমান আর-এক পিঠ গোল মতো উঁচু করা, অনেকটা হকি খেলার লাঠির মতো। যে পিঠটাকে সমান বললাম তাও একেবারে সমান নয়। ভালো করে দেখলে দেখা যায়, সেটাও কেমন একটু ঢেউ খেলানো মতন, কোথাও সামান্য উঁচু কোথাও সামান্য নিচু। বুমেরাঙের চেহারা নানারকম হয়।

 এখন বুমেরাঙের ব্যবহারের কথা বলি। এই অস্ত্রের সাহায্যে সে-দেশী লোকেরা তাদের প্রতিদিনের শিকার সংগ্রহ করে। লড়াইয়ের সময়েও এই অস্ত্রই তাদের প্রধান সম্বল। ওস্তাদ লোকেরা যখন এই অস্ত্র ছুড়ে মারে তখন অস্ত্রের চালচলন এমন অদ্ভুতরকমের হয় যে, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। অস্ত্র ছুড়ে মারলে তা কখনো সোজাসুজি সামনের দিকে ছুটে যায় না। খানিক দূর গিয়েই নানারকম উলটোবাজি খেতে থাকে, গোঁৎ খেতে খেতে আকাশে উঠে যায়, আবার অনেক সময়ে সোঁ করে ওস্তাদের কাছেই পালটে ফিরে আসে। প্রকাণ্ড গাছের আড়ালে শত্রু বা শিকার লুকিয়ে আছে, ওস্তাদ শিকারী গাছের আরেক দিকে থেকেই এমন কায়দায় বুমেরাং ছুড়ল যে, সে অস্ত্র গাছ এড়িয়ে প্রকাণ্ড চক্র দিমে ঘুরে শত্রু বা শিকারের গায়ে গিয়ে পড়ল।

 যুদ্ধের জন্য, শিকারের জন্য বা তামাশার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকমের বুমেরাং তৈরি হয়। যুদ্ধে যে-সব অস্ত্রের ব্যবহার হয় সেগুলি ছুঁড়ে মারলে আর ফিরে আসে না। শিকারের বুমেরাংগুলি এমনভাবে তৈরি যে দৈবাৎ যদি শিকার ফস্‌কে যায় তা হলে অস্ত্র আপনি শিকারীর কাছে ফিরে আসে। তামাশার বুমেরাংগুলি এমনভাবে বানায় যে ছুঁড়লে পর খুব সুন্দর বা খুব অদ্ভুতভাবে নানারকম কায়দা খেলিয়ে অস্ত্র আপনার ও ওস্তাদের বাহাদুরী দেখায়।

 আশ্চর্য এই যে, এই-সব অস্ত্র কেন যে ঐরকমভাবে চলে, তার সঠিক হিসাব আর নিয়মকানুন বার করতে গিয়ে মহা মহা পণ্ডিতেরাও অনেক সময় হার মেনে যান; অথচ পৃথিবীর অসভ্যতম জাতির কারিকরেরা সারা বছর ধরে এই-সব অস্ত্র নিখুঁতভাবে গণ্ডায় গণ্ডায় তৈরি করছে আর অসভ্য ওস্তাদেরা তার অব্যর্থ ব্যবহার দেখিয়ে সভ্য মানুষকে তাক্ লাগিয়ে দিচ্ছে। কেমন করে তাদের মগজে এমন বিদ্যা প্রবেশ করল, কোথা থেকে এমন অস্ত্রের সন্ধান পেয়ে এমন করে শিখল, তার উত্তর কেউ জানে না।

সন্দেশ-শ্রাবণ, ১৩৩০


সূর্যের রাজ্য

সূর্য নানারকমে আমাদের পৃথিবীর উপর কর্তৃত্ব করে। পৃথিবীর গতির একটা কেমন ঝোঁক আছে, সে যদি কোনোরকম সুবিধা পাইত তবে নিশ্চয়ই ছুটিয়া পথছাড়া হইয়া কোথায়

নানা নিবন্ধ
২৯৩