পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সুতরাং মঙ্গলে জল আছে, এ কথা স্বীকার করা যাইতে পারে। তাহা ছাড়া এই গ্রহের গায়ে খুব সরু সোজা সোজা লম্বা লম্বা অনেক দাগ দেখা যায়। এই দাগগুলি এলোমেলোভাবে ছড়ান নাই। বরং ইহা দেখিয়া স্বভাবতই মনে হয়, ঐ লম্বা রাস্তার মতো জিনিসগুলি ইচ্ছাপূর্বক বুদ্ধি খাটাইয়া নির্মাণ করা হইয়াছে। ইহা হইতে অনেকে অনুমান করিতেছেন যে, মঙ্গলে বুদ্ধিমান জীব থাকা সম্ভব, হয়তো তাঁহারা জলের সুবন্দোবস্তের জন্য বড়ো-বড়ো খাল কাটিয়াছেন, সেই খালের দুধারে গাছপালা হওয়ায় আমরা সেগুলিকে লম্বা লম্বা রেখার মতো দেখি। মঙ্গলের দুটি চাঁদ আছে, সেগুলি এতই ছোটো যে, খুব বড়ো দূরবীক্ষণ ছাড়া তাহাদের দেখাই যায় না। ইহার একটি এত তাড়াতাড়ি মঙ্গলের চারিদিকে ঘুরিয়া আসে যে, মঙ্গলের এক দিনে (সাড়ে চব্বিশ ঘণ্টায়) তাহার দুইবার উদয় ও দুইবার অস্ত হয়। মঙ্গলের পর অনেকগুলি খুব ছোটো ছোটো গ্রহ আছে, সেগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য নহে। এই গ্রহগুলির পরেই বৃহস্পতি।

 বৃহস্পতি ইহাদের মধ্যে প্রধান। ইহার আয়তন প্রায় সাড়ে বারোশত পৃথিবীর সমান। এ পর্যন্ত ইহার সাতটি চাঁদের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু সাধারণ দুরবীক্ষণে চারিটির বেশি দেখা যায় না। এই চারিটি চন্দ্রই আমাদের চাঁদের চাইতে বড়ো। বৃহস্পতি খুব বড়ো হইলেও এত তাড়াতাড়ি ঘুরে যে, প্রায় দশ ঘণ্টায় তাহার একদিন হয়। এত তাড়াতাড়ি ঘোরার দরুন তাহার মাঝখানটা বেশ ফুলিয়া উঠিয়াছে, সুতরাং বৃহস্পতিকে গোল না দেখাইয়া কতকটা বাদামী ধরনের দেখায়। বৃহস্পতির গায়ে সকল সময়েই কালো মেঘের মতো টান দেখা যায়।

 বৃহস্পতির পরেই শনি। ইহা আয়তনে বৃহস্পতির অর্ধেক। এই গ্রহের একটা আশ্চর্য বিশেষত্ব এই যে, ইহার চারিদিকে একটা আংটির মতো কি দেখা যায়। আংটিটা বেশি পুরু নয়, কিন্তু খুব চওড়া। ভালো দূরবীক্ষণ দিয়া দেখিলে দেখা যায়, আংটিটার মাঝে মাঝে ফাঁক আছে, যেন কয়েকটা আংটি পর পর একটার ভিতর আরেকটা সাজানো রহিয়াছে। এ পর্যন্ত ইহার দশটি উপগ্রহ আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহার মধ্যে কয়েকটি আমাদের চন্দ্রের অপেক্ষাও বড়ো।

 এ পর্যন্ত যে গ্রহগুলির কথা বলা হইল, ইহার সকলগুলিই শুধু চোখে বেশ উজ্জ্বল দেখায়। সেইজন্য অতি পুরাতন কাল হইতেই মানুষ ইহাদের কথা জানে। ১৭৮১ খৃস্টাব্দে সার্ উইলিয়াম হার্শেল তাঁহার স্বহস্তনির্মিত দূরবীক্ষণের সাহায্যে এক নুতন গ্রহ আবিষ্কার করেন। তাহার নাম রাখা হইল ইউরেনাস্। ইউরেনাস্ আয়তনে শনি অপেক্ষা ছোটো এবং এ পর্যন্ত ইহার চারটি চন্দ্র আছে বলিয়া জানা গিয়াছে।

 ইউরেনাসের আবিষ্কারের পর দেখা গেল যে, তাহার গতিবিধির মধ্যে একটা কেমন গোলমাল আছে। গণনার যে সময়ে ইউরেনাসের যে স্থানে থাকিবার কথা, উহা ঠিক স্থানে থাকে না। ইহা হইতেই গণনা করিয়া দুইজন পণ্ডিত সিদ্ধান্ত করিলেন যে, ইউরেনাসের বাহিরে এক গ্রহ আছে, তাহারই আকর্ষণে ইহার চলাফিরার এরূপ ব্যতিক্রম হয়। তাহারা গণিতের সাহায্যে নির্দেশ করিলেন যে, অমুক দিন, অমুক স্থানে দূরবীক্ষণ দিয়া খুঁজিলে গ্রহটিকে পাওয়া যাইবে। এইরূপে নেপচুনের আবিষ্কার হইল। নেপচুনের আয়তন ইউরেনাসের মতো। ইহার একটি চাঁদ আছে।

নানা নিবন্ধ
২৯৫