পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

একবার একটা গরিলার ছানাকে চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছিল। চিড়িয়াখানায় নানারকম অদ্ভুত জন্তু দেখতে তার খুব মজা লাগত—কোনো কোনোটার খাঁচার কাছে দাড়িয়ে সে খুব মন দিয়ে তাদের চাল-চলন দেখত। একটা শিম্পাঞ্জির বাচ্চা ছিল, সে নানারকম কসরৎ জানত—সে যখন ডিগবাজি খেয়ে বা হটোপাটি করে নানারকম তামাশা দেখাত, গরিলাটা ডারি খুশি হয়ে তার কাছে এসে বসত।

 গরিলার চেহারাটা মোটেও শান্তশিস্ট গোছের নয়—মানুষের মতো লম্বা, চওড়ায় তার দ্বিগুণ, গায়ের জোর তার দশটার মতো—তার উপর সে যখন রাগের চোটে চীৎকার করে নিজের বুকে কিল মারতে মারতে এগুতে থাকে তখন তার সেই শব্দ আর মুখভঙ্গি আর রকমসকম দেখে খুব সাহসী লোক পর্যন্ত ভয়ে আড়স্ট হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ দেখলেই গরিলা তেড়ে মারতে আসে না—বরং সে অনেক সময়ে মানুষকে এড়িয়েই চলতে চায়। কিন্তু তুমি যদি একেবারে তার বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হও তো সে কি করে বুঝতে পারে যে তোমার কোনোও দুস্ট মতলব নাই? বিশেষত লোকে যখন লাঠিসোটা নিয়ে হৈ হৈ করে জঙ্গলে হাজির হয়, তাতে যদি গরিলা খুশি না হয়, তবেই কি তাকে হিংস্র বলতে হবে?

সন্দেশ-কাতিক, ১৩২১
সেকালের লড়াই

 “সন্দেশে’ তোমরা নানারকম জানোয়ারের লড়াইয়ের কথা পড়েছ। কিন্তু বাস্তবিক লড়াইয়ের মতো লড়াই কাকে বলে যদি জানতে চাও তবে সেকালের জানোয়ারদের খোজ নিতে হয়। যে কালের কথা বলছি সে সময়ে মানুষের জন্ম হয় নি—সে প্রায় লাখ লাখ বছরের কথা। সে সময়কার জন্তুরা তো এখন বেঁচে নেই, তাদের খোঁজ নেবে কি করে? খোঁজ নেবার উপায় আছে।

 যে-সকল পণ্ডিতেরা নানারকম জানোয়ারের শরীর পরীক্ষা করে থাকেন, তারা একএকটা জানোয়ারের সামান্য দু-একটা হাড়, দাঁত বা শরীরের কোনো টুকরা দেখে সেই জানোয়ার সম্বন্ধে এমন অনেক কথা বলে দিতে পারেন যে শুনলে অবাক হতে হয়। সে আমিষ খায় কি নিরামিষ খায়, জলে থাকে কি ডাঙায় থাকে, দু পায়ে চলে না চার পায়ে চলে, সে কোন জাতীয় জন্তু, এ-সব কথা শুধু খানিকটা কংকাল পরীক্ষা করে চট্ করে বলা যেতে পারে। কিন্তু অনেক সময়ে পাহাড় কাটতে বা মাটি খুঁড়তে গিয়ে এমন সব হাড় পাওয়া যায় যেটা আমাদের জানা কোনো জন্তুর হাড় হতেই পারে না। মনে কর, একটা পায়ের টুকরা পাওয়া গেল প্রায় পাঁচ হাত লম্বা আর একটা হাতির পায়ের চেয়েও মোটা। সে হাড় আর এখন হাড় নেই, সে কোনকালে পাথর হয়ে গিয়েছে কিন্তু তার চেহারাটা সেইরকমই আছে। এই-সব হাড় পরীক্ষা করে সেকালের অদ্ভুত জন্তু সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য কথা জানা গিয়েছে।

 মনে করো একটা পাথর কাটতে গিয়ে তার মধ্যে একটা জানোয়ারের কংকাল পাওয়া গেল—সে পাথর এক সময়ে নরম মাটি ছিল—জানোয়ারটা তার মধ্যে মারা যায়।ক্রমে

৩০০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলীঃ২